Independence Day: কে পতাকার নকশা তৈরি করেছিলেন? স্বাধীনতা দিবসে জানুন জাতীয় পতাকার ইতিহাস

২০২৪ সাল, ৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস পালন করবে ভারত। ভারতের স্বাধীনতা দিবসের সঙ্গে যেটি ওতপ্রোতভাবে যুক্ত, সেটি হলো জাতীয় পতাকা। ভারতের জাতীয় পতাকা সার্বভৌম এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে। লালকেল্লার প্রাচীর থেকে ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সর্বত্র জাতীয় পতাকার অবস্থান সর্বোচ্চ স্থানে।

ভারতের জাতীয় পতাকার মধ্যে থাকে তিনটি রং, তাই একে তিরঙ্গাও বলা হয়। পতাকার ওপরের অংশে থাকা গেরুয়া রং শক্তি এবং সাহসের প্রতীক। মাঝের সাদা রং শান্তি এবং সত্যের প্রতিনিধিত্ব করে। নিচের গাড় সবুজ রং শস্য শ্যামলা ভারতবর্ষকে প্রতিনিধিত্ব করে। মাঝে থাকা চক্রটি দেশের উন্নতির গতির প্রতিনিধিত্ব করে।

যে জাতীয় পতাকাকে আপনি দেখেন সেটি ১৯২১ সালে ডিজাইন করা হয়েছিল, ডিজাইন করেছিলেন পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া। তবে আপনি হয়তো জানেন না, বর্তমানে যে জাতীয় পতাকাটিকে দেখতে পান আপনি, সেটির আগে বারংবার এর নকশা পাল্টানো হয়। জানেন ঠিক কতবার এবং কোন কোন সালে জাতীয় পতাকার নকশা পাল্টানো হয়েছিল?

১৯০৬ সাল: ১৯০৬ সালে জাতীয় পতাকার নকশা করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দের আইরিশ শিষ্য, সিস্টার নিবেদিতা। প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় কলকাতার পার্সি বাগান স্কোয়ারে। এটি ছিল স্বদেশী আন্দোলন, প্রতিরোধ এবং বিদেশী ব্রিটিশ পণ্য বয়কটের আহবানের প্রতীক। তিনটি রং এর সমন্বয়ে গঠিত পতাকার ওপরের অংশে ছিল সবুজ রং, সাথে আটটি সাদা পদ্ম। মাঝে হলুদ বর্ণে দেবনাগিরি লিপিতে লেখা বন্দে মাতরম, নিচে লাল রংয়ের অর্ধচন্দ্র এবং সূর্য।

(আরও পড়ুন: আগামিকাল বাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন? তাহলে অবশ্যই এই নিয়মগুলি জানুন)

১৯০৭ সাল: জার্মানির স্টুটগার্ট শহরে আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক কংগ্রেসের মাদাম বিকাজি কামা অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয় স্বায়ত্ত শাসন এবং সংস্থার সমর্থনে আবেদন হিসেবে দ্বিতীয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। এই জাতীয় পতাকাটি বার্লিন কমিটির পতাকা নামেও পরিচিত। এই পতাকাটির শীর্ষে কমলা রঙের উপর সাদা রঙের ফুল আঁকা আছে, মাঝে হলুদ রঙের মধ্যে কালো রঙ দিয়ে লেখা বন্দে মাতরম, নিচে সবুজ রঙের মধ্যে একদিকে সূর্য এবং অন্যদিকে অর্ধচন্দ্র এবং তারা।

১৯১৭ সাল: হোম রুল আন্দোলনের সময় অ্যানি বেসান্ত এবং বালগঙ্গাধর তিলক এই পতাকাটি উত্তোলন করেন। উপনিবেশিক শাসনের মধ্যে ভারতীয়দের জন্য বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাসনের দাবিকে প্রতিফলন করে এই পতাকাটি। এটির পৃষ্ঠদেশে রয়েছে লাল এবং সবুজ ডোরাকাটা দাগ, উপরের দিকে ব্রিটিশ পতাকা এবং তার নিচে সাতটি তারা, অন্যদিকে অর্ধচন্দ্র এবং তারা।

১৯২১ সাল: ১৯২২ সালে বিজয়ওয়াড়া কংগ্রেসের একটি অধিবেশনে পিঙ্গালি ভিঙ্কাইয়া মহাত্মা গান্ধীকে তাঁর পতাকার নকশা দেখান। এই পতাকাতে অনুভূমিক ভাবে রয়েছে সাদা সবুজ এবং লাল রঙ। এই পতাকাটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, হিন্দু মুসলমান এবং শিখদের মত বিভিন্ন সম্প্রদায়কে প্রতিনিধিত্ব করে। পতাকার কেন্দ্রে একটি চরকা রয়েছে যা শান্তিপূর্ণ সম্প্রীতিকে ইঙ্গিত করে। তবে এটিকে সরকারি পতাকা হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি।

১৯৩১ সাল: পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া কর্তৃক দ্বিতীয় পতাকাটি কংগ্রেস কমিটির সভায় অনুমোদিত হয়। এই পতাকাটি দেখতে অনেকটা ভারতীয় জাতীয় পতাকার মতোই ছিল। শুধুমাত্র মাঝে অশোক চক্রের পরিবর্তে ছিল চরকা।

(আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে বন্ধুদের পাঠান শুভেচ্ছাবার্তা, পাঠাতে পারেন কার্ডও)

১৯৪৭ সাল: ভারতের স্বাধীনতার পর জাতীয় পতাকা নির্বাচনের জন্য রাজেন্দ্র প্রসাদকে প্রদান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই পতাকাটি আইন, ন্যায় বিচার এবং ন্যায়পরায়ণতার প্রতীক। পতাকাটি তৈরি করেছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া, যিনি একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। মাদ্রাজ হাই স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক অর্জন করেন। ১৯১৬ সালে জাতীয় পতাকার ওপর একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছিলেন তিনি যেখানে ২৪ টি পতাকার নকশা ছিল, তার মধ্যেই ছিল ভারতের বর্তমান জাতীয় পতাকার নকশাও।