এবার ‘‌পেঁয়াজ গোলা’‌ তৈরি করতে উদ্যোগী রাজ্য সরকার, সংরক্ষণ করতে নয়া পদক্ষেপ

আলু ব্যবসায়ী সমিতি কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। তাই বাজারে আলুর দাম আবার বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তার মধ্যে পেঁয়াজের জন্য অন্য রাজ্যের উপর নির্ভর করতে হয়। তাদের দাম বাড়লে বাংলার বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এই অন্যের উপর নির্ভরতা কমাতে পেঁয়াজ উৎপাদনের পাশাপাশি সংরক্ষণেও গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে রাজ্য সরকার। তার জন্য বাংলার ৬টি জেলার ৭ হাজার বিঘা জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। যেখানে আগামী খরিফ মরশুম থেকে চাষ হবে পেঁয়াজের। বাংলা স্বনির্ভর হবে পেঁয়াজ ফসলে। আর তার সঙ্গে উৎপাদিত এই পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে তৈরি করা হবে ‘‌পেঁয়াজ গোলা’‌।

এই ‘‌পেঁয়াজ গোলা’‌ ১০টি জেলায় তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মোট ৯১৭টি পেঁয়াজ গোলা তৈরি করতে ভর্তুকি হিসেবে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তাতে অনেকটা উপকার হবে। প্রত্যেকটি গোলা তৈরির জন্য ৬৫ হাজার টাকা করে ভর্তুকি দেবে রাজ্য সরকার। বাজারে এখন পেঁয়াজের প্রতি কেজি দাম প্রায় ৪৫ টাকা ছুঁয়েছে। বর্ষাকালে যদি পেঁয়াজ নষ্ট হয় তাহলে দাম বৃদ্ধি পাবে। তাই বাংলার মানুষ যাতে কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারে তার জন্য কৃষি বিপণন দফতর মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ার চাষিদের কাছে থাকা কিছু পেঁয়াজ কিনেছে। আর সুফল বাংলার স্টলে কম দামে বিক্রির ব্যবস্থা করেছে।

আরও পড়ুন:‌ ‘‌আর কোনও অভয়ার যেন এমন পরিণতি না হয়’‌, রাখিবন্ধনের মধ্য দিয়েই বিচার চান চিকিৎসকরা

সুফল বাংলার স্টলে সস্তায় পেঁয়াজ এখনও মিলছে। তাতে মানুষের অনেকটা উপকার হয়েছে। পকেটে চাপ কমেছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতর সূত্রে খবর, রাজ্যে এখন বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ১৩ লক্ষ মেট্রিক টন। আগে রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন সামান্য হলেও গত কয়েক বছরে সেটা বেড়ে প্রায় ৮ লক্ষ মেট্রিক টন হয়েছে। তারপর বাকি চাহিদার জন্য ভিন রাজ্যের উপর নির্ভর করতে হয়। বাংলায় সুখসাগর প্রজাতির কালচে লাল রঙের পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। তবে এক্ষেত্রে আলুর মতো সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। তাই কৃষকরা পেঁয়াজের দাম পায় না বলে অভিযোগ। রাজ্যের চাহিদা পূরণ করতে মহারাষ্ট্রের নাসিক, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং বিহার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।

আর এই আমদানি বন্ধ করতে স্বনির্ভর হতে চাইছে বাংলা। পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য হিমঘরের প্রয়োজন নেই। যেখানে বাতাসে আর্দ্রতা কম, সেখানে কাঠের বা বাঁশের মাচা করে পেঁয়াজ গোলা তৈরি করে অন্তত চার মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে মুর্শিদাবাদের নওদায় পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এমনটা মনে করেন বিশেষজ্ঞরাও। এবার রাজ্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতর পেঁয়াজ সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছে। প্রথম দফায় ১০ জেলায় ৯১৭টি পেঁয়াজের গোলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। মালদায় ৫০টি এবং পূর্ব বর্ধমানে ৪২টি পেঁয়াজ গোলা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। মালদা, নদিয়া এবং পূর্ব বর্ধমান এই বিষয়ে অত্যন্ত উৎসাহী। আর নদিয়ায় ১২৪টি পেঁয়াজের গোলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে রাজ্য সরকার। হুগলি জেলাতে রাজ্য সরকার ১১৩টি পেঁয়াজের গোলা তৈরি করতে চায়।