ফেনীতে স্কুলছাত্র হত্যার ঘটনায় মামলা: আসামি সাবেক ৩ এমপি

ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে নির্বিচারে গুলিতে স্কুলছাত্র নিহতের ঘটনায় আরও একটি মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) নিহত শিক্ষার্থী ওয়াকিল আহমদ শিহাবের (১৭) মা মাহফুজা আক্তার বাদী হয়ে দেড়শ জনের নামসহ আরও ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ফেনী মডেল থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলা উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের ১৫১ জন নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত দেড়শ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে ফেনীতে ছয়টি হত্যা মামলায় দায়ের করা হলো। 

নিহত ওয়াকিল আহমদ শিহাব ফেনী সদর উপজেলার দক্ষিণ কাশিমপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। সে জায়লস্কর স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে আসামিদের অতর্কিত ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিতে মহিপাল প্লাজার সামনে শিহাব গুলিবিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আসামিরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠিসোঁটা, লোহার রড ও রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে বলে বাদী উল্লেখ করেছেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, আসামিরা পরস্পর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মহিপালে ছাত্রজনতার বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচিতে গণহত্যা, নৈরাজ্য সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে ১ ও ২ নম্বর আসামির নির্দেশে বাকি আসামিরা ফেনী পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে একাধিক ট্রাভেলিং ব্যাগ থেকে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি প্রাণহানিকর অস্ত্রশস্ত্র অন্যান্য আসামিদের হাতে প্রকাশ্যে তুলে দেয়। আসামিদের মহিপালে অবস্থানরত নিরস্ত্র ছাত্রজনতার ওপর সশস্ত্র হামলার নির্দেশ দেয়।

ফেনী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ‘এ ঘটনায় দায়েরকৃত পৃথক মামলায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অন্যান্য আসামির মধ্যে রয়েছেন- ফেনী সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, ফেনী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান করিম উল্লাহ বিকম ওরফে রেন্সু করিম, যুবলীগ নেতা জিয়া উদ্দিন বাবলু প্রমুখ।

গত ৪ আগস্ট অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন আন্দোলনকারীরা। একই সময়ে শহরের ট্রাংক রোডে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দুপুর ২টার দিকে মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মহিপাল ফ্লাইওভারের দিকে এগোতে থাকলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলি, ককটেল বিস্ফোরণে চারপাশ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। বিকাল ৫টা পর্যন্ত থেমে থেমে সেখানে সংঘর্ষ গুলির শব্দ শোনা যায়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে মহিপালের পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গুলিবিদ্ধ হওয়া ছাড়াও ইটপাটকেলের আঘাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, পথচারী ও সাংবাদিকসহ আহত হন দেড় শতাধিক মানুষ। এ ঘটনায় ফেনীতে এখন পর্যন্ত ৯ জন নিহত হয়েছেন।