হ্রদকে প্লাস্টিকমুক্ত করতে বোতল দিয়ে ‘দ্বীপ’ তৈরির প্ল্যান, তৈরি হতে পারে হোটেল

বিশ্বের কিছু প্রান্তে জঞ্জাল ব্যবস্থাপনার অভাবে পরিবেশ দূষণের মারাত্মক পরিণতি দেখা যাচ্ছে৷ আফ্রিকায় বেসরকারি উদ্যোগে কিছু অ্যাক্টিভিস্ট সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি এক অভিনব প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন৷

জোসাফাট রুবেঙ্গার মনমেজাজ বেশ ভালো রয়েছে৷ যদিও তাঁর বর্তমান কাজ মোটেই আনন্দ দেয় না৷ বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি নিজের ডিঙি নৌকা নিয়ে নিয়মিত কিভু হ্রদে যাচ্ছেন৷ গ্রিন হেলমেট টিমের বাকি সদস্যদের সঙ্গে তিনি সেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেন৷ জোসাফাট বলেন, ‘এটা এখন আমার জন্য রুটিন হয়ে উঠেছে৷ প্রতি সপ্তাহে আমি লেক কিভু পরিষ্কারের জন্য চার ঘণ্টা সময় দিই৷ আমি এই হ্রদ লালন করি৷ আমি এখানেই জন্মেছি, বড় হয়ে উঠেছি৷ সেটা আজ আমার অংশ হয়ে উঠেছে৷’

কিন্তু সেই হ্রদ প্লাস্টিকে ভরে উঠেছে৷ বুকাভু শহরে কাওয়া নদী যেখানে হ্রদে গিয়ে মেশে, সেখানেও নদীর তীরে জঞ্জাল ভরে গিয়েছে৷ পরিবেশ বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইভল্যাঁ নাতামপাকা বহুকাল ধরে এই সমস্যা পর্যবেক্ষণ করছেন৷ তাঁর মতে, ‘শুধু মানুষ নয়, এমন প্রবণতার ফলে জলের জীবদের জন্যও মারাত্মক পরিণতি দেখা যাচ্ছে৷ এই হ্রদ আসলে মাছ ও সেগুলির শাবকদের নার্সারি হওয়া উচিত ছিল৷ মাছ সেখানে এসে বংশবৃদ্ধি করবে, এখানে এমন পরিবেশ থাকা উচিত ছিল৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই জায়গা ইতিমধ্যেই দূষিত হয়ে যাওয়ায় মাছও এই এলাকা থেকে পালাতে বাধ্য হচ্ছে৷’

কঙ্গোয় বর্জ্য সংগ্রহের কোনও প্রণালী চালু নেই৷ প্রতিদিন হাজার-হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য বেআইনি আবর্জনার স্তূপে জমা হয় বা চারপাশে ফেলে দেওয়া হয়৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একইরকম বিপর্যয় দেখা যায়৷

স্থানীয় মানুষ সম্প্রতি লেক কিভুর নিজস্ব ‘সাম্বাসা’ সার্ডিন মাছের অভাব স্পষ্ট লক্ষ্য করছেন৷ সেই হ্রদ পরিষ্কার না করা হলে মাছের সংখ্যা আরও কমে যাবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ সেখানকার পেশাদারি জেলেদের জন্য এর সুদূরপ্রসারী পরিণতির আশঙ্কা করা হচ্ছে৷

সে কারণে গ্রিন হেলমেট গোষ্ঠীর অ্যাক্টিভিস্টদের কাজ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে৷ অনেকে শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করে এক কালেকশন পয়েন্টে নিয়ে যাচ্ছেন৷ পরিমাণ অনুযায়ী, তাঁরা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন৷ এক বস্তা জঞ্জালের জন্য এক ইউরোর সামান্য কম অর্থ উপার্জন করা যায়৷ প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহকারী হিসেবে মুনগাঙ্গা অ্যানোসঁ বলেন, ‘এই কাজ আমাকে অনেক সাহায্য করে৷ কারণ বোতল সংগ্রহ করে আমি আমার পরিবারকে সাহায্য করতে পারছি৷’

বোতলগুলি ব্র্যান্ড অনুযায়ী আলাদা করা হয়৷ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলিকে এই উদ্যোগে সহায়তা করানোই হল লক্ষ্য৷ তারপর সংগ্রহ করা প্লাস্টিক নির্মাণের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়৷

তরুণ অ্যাক্টিভিস্টরা বোতল দিয়ে ভাসমান এক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন৷ তাঁদের মডেলের ভিত্তিতে আরও বড় প্রকল্প তৈরি করাই তাঁদের লক্ষ্য৷ ১,২০০ বর্গ মিটারের চেয়েও বড় জায়গা জুড়ে লেকের মাঝখানে ‘তিলাটোপিয়া’ নামের কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ করতে চান তাঁরা৷ জোসাফাট রুবেঙ্গা জানান, ‘এখানেই আমরা তিলাটোপিয়া উদ্যোগ কার্যকর করতে চাই৷ সেটা এক হোটেল কমপ্লেক্স হবে৷ সেখানে ছয় জন অতিথির থাকার ঘর থাকবে৷ বহুমুখী এক হলে প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে৷’

কিন্তু সেই উদ্যোগ কার্যকর করতে তাঁদের প্রায় ২৫ লাখ প্লাস্টিক বোতল সংগ্রহ করতে হবে৷ সেটা এক বিশাল কর্মকাণ্ড৷ গ্রিন হেলমেট গ্রুপ অবশ্য নিজেদের প্রত্যয়ে অটল রয়েছে৷

(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)