‘গোটা বাংলার মানুষ আঙুল তুলে বলছে, মুখ্যমন্ত্রী তোর কাপড় কোথায়?’

বিজেপির স্বাস্থ্য ভবন অভিযানের শেষে মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশকে উদ্দেশ করে একের পর এক প্রশ্ন তুললেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। পিছিয়ে রইলেন না দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিজেপির স্বাস্থ্য ভবন অভিযানকে কেন্দ্র করে বিধাননগর সেক্টর ফাইভে ধুন্ধুমার বাঁধে।

এদিন দিলীপবাবু বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল স্বাস্থ্যভবন ঘেরাও করা। ঘেরাও মানে ভাঙাভাঙি নয়। আমাদের পুলিশ বন্ধুরা আমাদের কাজটা করে দিয়েছেন। তারা পুরো সেক্টর ফাইভ ঘেরাও করে দিয়েছেন। সেজন্য তাদের ধন্যবাদ। এই আন্দোলনে পুলিশ কর্মচারীদেরও সমর্থন রয়েছে। তারা মুখ খুলতে পারেন না। তাদের দিয়ে অনেক অন্যায় কাজ করা হচ্ছে। বিনীত গোয়েলকে দিয়েও সেই কাজ করানো হয়েছে। তিনি একজন আইপিএস অফিসার। আইন জানা সত্বেও লোককে ভুল তথ্য দিয়েছেন। তিনি ডিসিপ্লিনড একজন পুলিশ। তাই ওপরের নির্দেশে এটা করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু আমরা সবাই সমাজের কাছে দায়বদ্ধ। জনতার এই আন্দোলনকে আটকাতে এসে বিজেপি এগিয়ে আসবে। যারা এই অহিংস আন্দোলনকে সহিংস করার চেষ্টা করছেন তাদের বলছি, আগুন নিয়ে খেলবেন না। আমরা চাই অপরাধীর সাজা ও তাকে যে আড়াল করছেন, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী তার পদত্যাগ। এর বাইরে কোনও দাবি চলবে না।’

আরও পড়ুন – ‘আরজি করের ইন্টার্নদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গিয়েছে তৃণমূল নেতাদের কাছে’

পড়তে থাকুন – ‘উনি যত তাড়াতাড়ি পারেন গদি ছাড়ুন, বাংলার মানুষকে রেহাই দিন’

 

এর পর বলতে উঠে কলকাতা পুলিশ ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেন সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, ‘এখানে যে ব্যারিকেড আছে বিজেপি ফুঁ দিলে উড়ে চলে যাবে। কিন্তু বিজেপি সেটা করে না। বিজেপি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিশ্বাস করে। কিন্তু পুলিশের কেন এত ভয়? কারণ, চোরের মন সব সময় পুলিশ পুলিশ। আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়করা বিধানসভা ভাঙচুর করেছিলেন। তাই মুখ্যমন্ত্রী সব সময় ভয়ে ভোগেন, বিরোধী হলেই বুঝি ভাঙচুর করবেন, আগুন জ্বালাবে। না মুখ্যমন্ত্রী, আমরা দেশভক্ত, আমরা নরেন্দ্র মোদীর ভক্ত, আমরা ভাঙচুর করি না।’

সুকান্তবাবুর প্রশ্ন, ‘আজ আপনি আমাদের নেতাদের গ্রেফতার করছেন? মুখ্যমন্ত্রী আপনার এই পুলিশ সেদিন কোথায় ছিল? বিনীত গোয়েল বীরপুঙ্গব সেদিন কোথায় ছিলেন? যে ৬০ হাজার লোক ব্যারিকেড ভেঙে ঢুকে গেল আরজি করের ভিতরে। ঢুকে ভাঙচুর করে দিল। তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা ঢুকেছে।’

এমনকী স্বাস্থ্য দফতর মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক এসপি দাস পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ করে সুকান্তবাবু বলেন, ‘দুর্নীতির প্রতীক স্বাস্থ্যভবন কে চালায়? পশ্চিমবঙ্গের মানুষ হয় তো জানে না। তারা ভাবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই স্বাস্থ্যভবন চালান। তাঁর নির্দেশে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য চালান। সবাই আপনারা ভুল জানেন। সত্যি কথা কেউ জানেন না। এই স্বাস্থ্যভবন চালান ডাক্তার SPD. তিনি মুখ্যমন্ত্রীর একদম কাছের বন্ধু। আমরা এর বেশি আর বাইরে বলি না। কারণ তিনিও একজন মহিলা। আমরা কোনও মহিলার সম্মান নিয়ে টানাটানি করতে চাই না। আপনারা খুঁজুন, কে এই ডাক্তার শ্যামাবাবা? এই শ্যামাবাবার কারবার কোথা থেকে চলে? কেন তাঁর মেয়ের জন্য PGতে মন্ত্রিসভার বৈঠক করে পদ তৈরি করতে হয়? মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কী? মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে কেন এত তোয়াজ করেন?’

সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, ‘এখন একের পর এক যে অভিযোগ উঠে আসছে, দেহ বিক্রি, দেব ব্যবসা, পর্নোগ্রাফি, ড্রাগ র্যাকেট, প্রশ্ন ফাঁস, আমি জানি না, আমার আপনার ঘরের সেই নিরীহ মেয়েটা কী জেনে ফেলেছিল। যার জন্য তাঁকে আজকে জীবন দিতে হল।’

কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে আক্রমণ করে সুকান্তবাবু বলেন, ‘সিপির কি এক শতাংশও লজ্জা নেই? তিনি ঘুরে এসে বলেছিলেন, শরীরে বাইরে থেকে কোনও আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছি না। অথচ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে মেয়েটির দেহে ১৫টি ক্ষত রয়েছে। আপনি যদি সেই ক্ষত দেখতে না পান আপনি অপদার্থ সিপি। আপনি পদত্যাগ করুন।’

আরও পড়ুন – ঘরে – বাইরে চাপের মুখে পড়ে ন্যাশনাল মেডিক্যালের অধ্যক্ষ হিসাবে সন্দীপ ঘোষের নিয়োগ বাতিল করল রাজ্য সরকার

এর পর মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কেন মেয়েটির দেহ তাড়াতাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, লজ্জা থাকলে জবাব দিন মুখ্যমন্ত্রী? আপনি সামনে এসে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের জাবাব দিন। আজ স্লোগন উঠেছে, পুলিশ তুমি চিন্তা করো, তোমার মেয়েও হচ্ছে বড়ো। নিচুতলার কর্মীরা হয়তো চিন্তা করছেন। কিন্তু গোটা বাংলার মানুষ চিন্তা করছে। গোটা বাংলার মানুষ আঙুল তুলে বলছে, মুখ্যমন্ত্রী তোর কাপড় কোথায়? আর মুখ্যমন্ত্রী দাম কষছেন। এবার ধর্ষিতার দাম ধরেছেন ১০ লক্ষ টাকা। আমরা চাঁদা তুলে ১ কোটি টাকা দেব, আপনি পদত্যাগ করুন। আর আমাদের বোনকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিন।’