যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে বাধা গাজায় সেনা মোতায়েন রাখার ইসরায়েলি দাবি

ইসরায়েলের গাজায় সামরিক উপস্থিতি ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি নিয়ে মতবিরোধের কারণে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তি আটকে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার মার্কিন মধ্যস্থতায় গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত আলোচনার সঙ্গে জড়িত দশটি সূত্র এ কথা বলেছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

সূত্রগুলোর মধ্যে দুজন হামাস কর্মকর্তা এবং তিনজন পশ্চিমা কূটনীতিক রয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, হামাস যখন মে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার একটি সংস্করণ মেনে নেয়, তখন ইসরায়েল নতুন কিছু দাবি উত্থাপন করে। যা এই মতবিরোধের কারণ।

সূত্রগুলো বলছে, বিশেষ করে ইসরায়েলের নেৎজারিম করিডোর এবং ফিলাডেলফি করিডোরে সেনা মোতায়েনের সর্বশেষ দাবি নিয়ে হামাস উদ্বিগ্ন।

নেৎজারিম করিডোর হলো একটি পূর্ব-পশ্চিম দিকের করিডোর যা ইসরায়েল বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং এটি গাজার উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করছে।

হামাসের সূত্রগুলো দাবি করছে, ইসরায়েল তাদের শর্তাবলী পরিবর্তন করেছে এবং যে কোনও ছাড় দিলেই নতুন দাবি উত্থাপন করা হবে বলে আশঙ্কা করছে হামাস। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অফিস থেকে এই আলোচনার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

হামাসের মিডিয়া অফিসও এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, গত সপ্তাহের আলোচনার প্রস্তাবটি নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক অবস্থানের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ এবং তারা নতুন আলোচনা শুরু করার পরিবর্তে জুলাই মাসে হওয়া ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির বাস্তবায়ন চাইছে।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন প্রস্তাবে নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের গাজার উত্তর অংশে ফিরতে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা পরবর্তী পর্যায়ে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মঙ্গলবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ইসরায়েল নতুন মার্কিন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং হামাসকেও তা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এই বিষয়ে পরবর্তী আলোচনা কায়রোতে অনুষ্ঠিত হবে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানি, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ পরিচালক বিল বার্নস এবং মিসরের প্রধান আলোচক এতে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

ফিলাডেলফি করিডোর নিয়ে মিসরও উদ্বিগ্ন। ইসরায়েলি বাহিনীর স্থায়ী উপস্থিতির বিরোধিতা করে মিসর বলেছে, করিডোরের সুরক্ষা ১৯৭৯ সালের মিসর-ইসরায়েল শান্তি চুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে।

যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও, মার্কিন মধ্যস্থতাকারীরা আলোচনা চালিয়ে যেতে চাচ্ছেন।

এই সংঘাত শুরু হয় ৭ অক্টোবর, যখন হামাস গাজা থেকে ইসরায়েলে হামলা চালায়। এরপর থেকে গাজায় ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।