ইসলামের প্রতি দাওয়াত: ফজিলত ও পদ্ধতি

ইসলাম সমগ্র মানব জাতিকে দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার পথ দেখায়। যারা এ পথ থেকে দূরে, অন্ধকারে- তাদের এদিকে পথ নির্দেশ করা আলোকিত মানুষদের আবশ্যকীয় দায়িত্ব। এই নির্দেশনা আমরা পেয়েছি রাসুল (সা.)-এর হাদিস থেকে। তিনি সাহাবাদের উদ্দেশে বলেন,  ‘তোমরা আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও পৌঁছে দাও’ (তিরমিজি)। বিদায় হজের ভাষণে মহানবী (সা.)–এর সর্বশেষ বাক্য ছিল, ‘তোমরা যারা উপস্থিত রয়েছ, তারা যেন অনুপস্থিতদের কাছে (দ্বীনের বার্তা) পৌঁছে দাও’ (সিরাতে ইবনে হিশাম)। এজন্য সাহাবা, তাবেঈন, তাবে তাবেঈনরা যুগে যুগে ইসলামের মহান বাণী অন্যদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন এবং ওলামায়ে কেরাম ও মুমিন বান্দাদের মাধ্যমে এই সিলসিলা আজও জারি রয়েছে।

ইসলামে দাওয়াতের মূল বার্তা হলো- মানুষকে এই দাওয়াত দেওয়া যে, আল্লাহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোনও শরীক নেই এবং মোহাম্মদ (সা.) আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসুল। একইসঙ্গে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার দাওয়াত দেওয়ার প্রতিও ইসলাম বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছে। যারা মানুষকে এরূপ কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, আল্লাহ তায়ালা তাদের সফল মানুষ আখ্যায়িত করেছেন। পবিত্র কোরআনের আয়াত- ‘আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল যেন থাকে, যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎ কাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে; আর তারাই সফলকাম’ (সুরা আল-ইমরান, আয়াত: ১০৪)।

পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানব জাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে; তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে, অসৎ কাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করবে’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১০)।

অন্যকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দেওয়ার পদ্ধতি কেমন হবে- সে সম্পর্কেও সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আহ্বান করো তোমাদের রবের পথে হিকমত এবং সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে’ (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ১২৫)। দাওয়াতের ক্ষেত্রে কোনও জোরজবরদস্তি কাম্য নয়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে হজরত মুসা (আ.)-এর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে এভাবে- ‘(হে মুসা ও হারুন) তোমরা দুই জন ফির‘আউনের কাছে যাও, কেননা সে তো সীমা লঙ্ঘন করেছে। তার সঙ্গে তোমরা নম্রভাবে কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে কিংবা (আল্লাহর) ভয় করবে’ (সুরা ত্বহা, আয়াত: ৪৩-৪৪)। ফেরাউন ছিল আল্লাহর চরম অবাধ্য। তারপরও তাকে দাওয়াতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা মুসা (আ.)-কে কোমল ভাষায় দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘দ্বীনের মধ্যে জবরদস্তির অবকাশ নেই, নিশ্চয় হিদায়াত গোমরাহী থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। কাজেই যে ব্যক্তি মিথ্য মা’বুদদের (তাগুতকে) অমান্য করলো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলো, নিশ্চয়ই সে দৃঢ়তর রজ্জু ধারণ করলো যা ছিণ্ণ হওয়ার নয়। আল্লাহ সর্বশ্রোতা এবং সর্বজ্ঞাতা’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৬)।

তবে কেউ যদি ইসলাম ও হেদায়াতের প্রতি দাওয়াত পেয়েও তা গ্রহণ না করে, সে দায় দাওয়াতকারীর ওপর বর্তাবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘এতদসত্ত্বেও তারা যদি মুখ ফিরিয়েই নেয় (তাহলে ফিরিয়ে নিক, কারণ), আমি তোমাকে তাদের হিফাযাতকারী বানিয়ে পাঠাইনি। কথা পৌঁছে দেওয়াই তোমার দায়িত্ব। আমি যখন মানুষকে আমার রহমত আস্বাদন করাই, তখন সে উৎফুল্ল হয়। আর যখন তাদের কৃতকর্মের কারণে তাদের কোনও অনিষ্ট হয়, তখন মানুষ অকৃতজ্ঞ হয়ে যায় (সুরা শুরা, আয়াত: ৪৮)। কারণ, হেদায়াতের মালিক মানুষ নয়; বরং আল্লাহ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে নবী, তুমি যাকে পছন্দ করো, তাকে হেদায়াত করতে পারবে না, তবে আল্লাহ্ তায়ালাই যাকে ইচ্ছা হেদায়াতের পথে আনয়ন করেন। কে সৎপথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই অধিক অবগত আছেন’ (সুরা কাসাস, আয়াত: ৫৬)।

কিন্তু এ সত্ত্বেও যে ব্যক্তি মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেবে, তার জন্য রয়েছে অফুরন্ত প্রতিদান। এ প্রসঙ্গে একাধিক হাদিস বর্ণিত রয়েছে। একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেউ হিদায়াতের দিকে আহ্বান করলে যত জন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করবে তাদের সওয়াবের কোনও কমতি হবে না। আর কেউ ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করলে যত জন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান পাপের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করবে তাদেরও পাপের কোনও কমতি হবে না’ (মুসলিম, হাদিস: ২৬৭৪)। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করেন। আমিন।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী; শিক্ষক, মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ, ঢাকা।