বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যা করণীয়

বন্যা পরবর্তী পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলন (পরিজা)। শনিবার (২৪ আগস্ট) পরিজা’র সভাপতি প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান ও সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, এই আকস্মিক বন্যায় সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে বন্যাকবলিত অঞ্চলের মানুষের জনস্বাস্থ্য। পানি নেমে যাওয়া শুরু হলেই ডায়রিয়াসহ নানান পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমাদের সামনে আসবে। এক্ষেত্রে মৃত প্রাণীগুলোর দ্রুত সৎকার করা, পানির উৎসগুলোকে দ্রুত জীবাণুমুক্ত করা, প্রচুর নিরাপদ পানি ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

বিবৃতিতে নেতারা আরও বলেন, ১৯৯১ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের অধিকাংশ টিউবওয়েল জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। পরিবেশ অধিদফতরের তৎকালীন চট্টগ্রামের প্রধান ব্যক্তি প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান টিউবওয়েলগুলোতে ব্লিচিং পাউডার পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ করে তা দ্রুততার সঙ্গে ব্যবহারের উপযোগী করেছিলেন। এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদফতর ও স্বেচ্ছাসেবীরা পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।

টিউবওয়েল বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতি সম্পর্কে পরিজার নেতারা বলেন, ১০ লিটার পানি (হাতের কাছে যা পাওয়া যায়) একটি বালতিতে নিতে হবে এবং তার সঙ্গে তিন আঙুলের এক চিমটি ব্লিচিং পাউডার বালতিতে দিয়ে ৫ মিনিট ধরে মিশাতে হবে। এরপর টিউবওয়েলের মুখটি হাত দিয়ে চেপে ধরে রেখে বালতির পানি টিউবওয়েলে ঢেলে দিতে হবে। কিছু পানি টিউবওয়েলের ভেতরে আর কিছু উপচিয়ে পড়বে। ৫ মিনিট রেখে দেওয়ার পর টিউবওয়েলের মুখটি চেপে ধরে থেকে ৫ মিনিট পানি চেপে ফেলে দিতে হবে। এতে ব্লিচিং পাউডারের কোনও অবশিষ্ট কিছুই থাকবে না। টিউবওয়েলের ভূগর্ভস্থ পানিতে কোনও জীবাণু থাকে না বিধায় পানি নিরাপদ ও পানযোগ্য হবে।

বিবৃতিতে নেতারা আরও বলেন, এ ধরনের আকস্মিক বন্যার বিষয়ে আগাম প্রস্তুতি নির্ভর করে নদীর উৎস তথা প্রতিবেশী দেশ ভারতের তথ্য প্রদান ও তাদের কার্যক্রম এবং আমাদের আবহাওয়া অধিদফতর ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যের ওপর। এক্ষেত্রে কেউই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেননি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারের উচিত বিষয়টি ভারতের কাছে জোরালোভাবে তুলে ধরা এবং আমাদের সংস্থাগুলোর কোনও গাফিলতি রয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা।

এসময় মোমবাতির ব্যবহার পরিহার করতে বলা হয়। কারণ হিসেবে পরিজার নেতারা বলেন, বাজারে যেসকল মোমবাতি পাওয়া যায় সেটা প্যারাফিনের মোমবাতি যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বিশেষ করে নবজাতক শিশু, গর্ভবতী নারীদের জন্য।

গণমাধ্যমের কর্মকাণ্ডকে সাধুবাদ জানিয়ে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে আরও উদ্যোগী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানায় পরিজা। এসময় বন্যাকবলিত এলাকায় দ্রুত করণীয় কয়েকটি বিষয় উত্থাপন করা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

১. বন্যাকবলিত এলাকার বিদ্যুৎ সংকটের কথা বিবেচনা করে খাবারের পাশাপাশি চার্জার-ব্যাটারি, হারিকেন ও কেরোসিনের ব্যবস্থা করা।

২. পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও প্রচুর বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে টিউবওয়েলগুলোকে দূষণমুক্ত করা ও ব্যবহার উপযোগী করা।

৩. মৃত গবাদিপশু দ্রুততার সঙ্গে মাটিতে পুঁতে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. বন্যাকবলিত মানুষের টয়লেট ও পয়ঃবর্জ্য একটি মারাত্মক ঝুঁকি। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট তড়িৎ উদ্যোগ নিতে হবে।

৫. ডায়রিয়া মোকাবিলায় পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন সরবরাহ করা।

৬. বন্যার পানি নেমে গেলে দ্রুততার সঙ্গে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৭. জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সকল অধিদফতরকে তড়িৎ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।