Muhammad Yunus: ‘এমন একটা বাংলাদেশ গড়ব যেখানে মন্দিরকে পাহারা দিতে হবে না…’ জন্মাষ্ঠমীতে ইউনুস

আরিফুল ইসলাম মিঠু, ঢাকা

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সোমবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা মন্দিরের জমিসহ হিন্দুদের সম্পত্তি দখলের বিষয়টি উত্থাপন করেন।

এর আগে গত ১৩ অগস্ট ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উদ্বেগ নিরসনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে এটি ছিল তাঁর দ্বিতীয় বৈঠক। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের কিছু অংশে হিন্দু ও খ্রিস্টানদের ওপর হামলার খবর পাওয়া গেছে।

হিন্দু নেতারা দেশের অন্যতম প্রাচীন মন্দির ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ড. ইউনুসের বক্তব্যের প্রশংসা করে বলেন, এটি দেশে একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন এবং সমাজে ধর্মীয় সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তারা হিন্দু মন্দিরের জমিসহ হিন্দুদের সম্পত্তি দখলের বিষয়টি উত্থাপন করেছেন।

ইউনুস বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি বৃহত্তর পরিবার, যেখানে সরকারের দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রক্ষা করা। তিনি বলেন, তিনি এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চান যেখানে প্রত্যেকে নির্ভয়ে তাদের ধর্ম পালন করতে পারবে এবং যেখানে কোনও মন্দির পাহারা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।

তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে হিন্দু নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে কোনো বিভেদ থাকতে পারে না। আমরা সমান নাগরিক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রক্ষায় বদ্ধপরিকর।

প্রফেসর ইউনুস জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। হিন্দু নেতারা বলেন, বাংলাদেশের সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য তারা ভগবান কৃষ্ণের আশীর্বাদ চেয়েছেন।

হিন্দু নেতারা জানান, তারা দেশের বন্যাকবলিত এলাকায় জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠান স্থগিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, তাঁরা বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্য ও ত্রাণ পাঠিয়েছে। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং প্রায় ২০ জন মারা গেছে।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কাজল দেবনাথ ও মনীন্দ্র কুমার নাথ, ইসকনের চারু চরণ ব্রহ্মচারি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের বাসুদেব ধর ও সন্তোষ শর্মা এবং ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রীতি চক্রবর্তী ইউনুসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

বাংলাদেশের প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ হিন্দু। ভারত সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের বিষয়টি তুলে ধরেছে। ইউনুস বলেছেন, তার প্রশাসন সংখ্যালঘুসহ সকল মানুষের অধিকার রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং হিন্দুদের ওপর বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যমে হামলার খবরকে অতিরঞ্জিত বলে বর্ণনা করেছেন।