Unique Rajasthan school: অনবদ্য পদ্ধতিতে তৈরি রাজস্থানের এই স্কুল, এসি ছাড়াই ঠান্ডা থাকে ঘর

প্রচন্ড তাপদাহে যেখানে সারা ভারতবর্ষের স্কুলগুলিতে এক্সট্রা ছুটি ঘোষণা করে দেওয়া হয়, ঠিক সেখানেই মরুভূমির মাঝে তৈরি হওয়া একটি স্কুলে রমরমিয়ে চলে ক্লাস। কোনও এসি নয়,এই স্কুলটিতে ব্যবহার করা হয়েছে এমন কিছু টেকনোলজি, যার ফলে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরমেও ঠান্ডা থাকে স্কুলের ঘর।

ভারতের রাজস্থানে থর মরুভূমির বুকে অবস্থিত একটি শহর হল জয়সালমীর। ইতিহাসের পাতায় যাকে বলা হয় ‘গোল্ডেন সিটি’। হলুদ বেলে পাথর দিয়ে তৈরি বিভিন্ন স্থাপত্যের কারণেই এই শহরকে ‘গোল্ডেন সিটি’ বলা হয়। তবে মরুভূমির মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় গ্রীষ্মকালে এই গোল্ডেন সিটির তাপমাত্রা পৌঁছে যায় ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত।

অত্যাধিক গরমের কথা মাথায় রেখেই জলসালমীরের বেশিরভাগ বাড়ি এমন ভাবেই তৈরি করা হয়, যাতে ভেতরে থাকা মানুষগুলি বেশি কষ্ট না পায়। এমনই একটি অনন্য স্থাপত্য হল জয়সালমিরের রাজকুমারী রত্নাবতী গার্লস স্কুল। নিউ ইয়র্কের স্থপতি ডায়ানা কেলোগ এই স্কুলটির নকশা তৈরি করেছিলেন।

(আরও পড়ুন: ফুটপাত ভাড়া দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় হকারদের, মাঠে নামল কলকাতা পৌরসভা)

ভারতের যে রাজ্যে এখনও নারী শিক্ষার হার কম, যেখানে এখনও নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে লড়াই করতে হয় নারীদের, সেখানে এই অনন্য স্কুলটি নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিদেশের এক বিখ্যাত নারী স্থপতিকে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংস্থা সিআইটিটি – এর উদ্যোগে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

এই সংস্থাটি রাজস্থানের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মধ্যে আর্থিক এবং শিক্ষা সহায়তা প্রদান করে। তিন স্তরে প্রকল্পের মধ্যে প্রথম ধাপে ছিল এই স্কুলটি নির্মাণ করা। এই প্রকল্পের মধ্যে নারীদের জন্য কো-অপারেটিভ সেন্টার এবং এক্সিবিশন স্পেস তৈরিও রয়েছে।

বেলে পাথর দিয়ে তৈরি এই স্কুলটিকে বিল্ডিং অফ দ্যা ইয়ার হিসাবে অভিহিত করেছে আর্কিটেকচারাল ডিজাইন ইন্ডিয়া। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে চালু হওয়া এই স্কুলটিতে বর্তমানে ১২০ জন মেয়ে পড়াশোনা করছে। এবার আসা যাক আসল কথায়। কীভাবে গরমের মধ্যেও এই স্কুলটিতে ঠান্ডা পরিবেশে পড়াশোনা করছে মেয়েরা? জানুন।

বছরের পর বছর ঠান্ডা রাখার জন্য প্রচলিত কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে এই স্কুলটি তৈরি করার সময়। স্কুলের ভেতরে তাপমাত্রা বাইরের থেকে ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট কম থাকে। মূলত বেলে পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই স্কুলটি। বেলে পাথর ব্যবহার করলে বাইরের তাপ ভেতরে সেইভাবে প্রবেশ করতে পারে না, আবার রাতেও ঠান্ডা ভাব বজায় থাকে।

(আরও পড়ুন: খাবারে অজান্তেই খেয়ে ফেলছেন প্লাস্টিক! খাদ্য সুরক্ষা দিতে নতুন উদ্যোগ FSSAI-এর)

কেলোগ বলেন, ‘একদিকে যেমন বেলে পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই স্কুলটি, তেমন চুন দেওয়া হয়েছে স্কুলের ভেতরের দেওয়ালগুলি। এছাড়া শ্রেণী কক্ষের ভেতরে উঁচু সিলিং এবং জানলা থাকায় ভেতরের তাপ খুব সহজে বাইরে বেরিয়ে যায়। স্কুলের ছাদে বসানো হয় সোলার প্যানেল ক্যানোপি, যা দিয়ে সূর্যের তাপ কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। এর ফলে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলেও কোনও সমস্যা হয় না।’

প্রসঙ্গত, এই স্কুলটিতে ঠান্ডা পরিবেশ থাকার কারণে মেয়েরা অনেক বেশি স্কুলমুখী হয়েছে। বাড়িতে ফ্যান না থাকার কারণে যে সমস্ত বাচ্চারা কষ্ট পায়, তারা বেশিরভাগ সময় স্কুলের সময় কাটিয়ে যায়। এতে একদিকে যেমন তারা গরমের হাত থেকে রেহাই পায় তেমন অন্যদিকে পড়াশোনার দিকেও আগ্রহ তৈরি হয় তাদের।