সচিবালয়ে আটকে পড়া আনসার সদস্যদের রাতে নেওয়া হয়েছে থানায়

টানা ১০ ঘণ্টা সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ রাখার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মুখোমুখি হন আনসার সদস্যরা। সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় মুখে ছত্রভঙ্গ হন আনসারের সদস্যরা। এসময় বেশিরভাগ আনসার সদস্য ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেও আটকে পড়েন শতাধিক সদস্য। সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পর রাতেই তাদের প্রিজন ভ্যানে করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া 

মধ্যরাতে কিছু আনসার সদস্যকে আত্মসমর্পণ করতে দেখা গেছে। এসময় কিছু আনসার সদস্য নিজেরাই নিজেদের ইউনিফর্ম খুলে ফেলতেও দেখা গেছে। এসময় তারা হাত জোর করে ক্ষমাও চেয়েছেন। পরে সেনা সদস্যদের উপস্থিতিতে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের নাম খাতায় লিপিবদ্ধ করে প্রিজন ভ্যানে তোলেন।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন পেশাজীবীদের দাবি-দাওয়ার মধ্যেই আন্দোলনে নামেন আনসার সদস্যরা। তাদের কয়েকটি দাবির মধ্যে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন আনসার সদস্যরা। একই দাবিতে রবিবার সকালেও প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন তারা। এক পর্যায়ে তারা বেলা ১২টার দিকে সচিবালয়ের চারপাশে পাঁচটি ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। দিনভর নানান নাটকীয়তার পর আন্দোলন গড়ায় রাত পর্যন্ত।

এক পর্যায়ে সচিবালয় থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফেসবুকে পোস্ট করে আনসার সদস্যদের প্রতিরোধের ঘোষণা দেন। তারা ফেসবুক পোস্টে শিক্ষার্থীদের রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান এবং আনসার সদস্যদের প্রতিরোধ করতে বলেন।

পরে সারজিস আলম গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, তাদের মধ্যস্ততায় আনসার সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল ভেতরে গিয়ে আলোচনায় করে। তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়ার কথাও জানানো হয়। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সেটা মেনেও নিয়েছিলেন। তবে বাইরে থাকা কিছু সদস্য তাদের বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

দুই সমন্বয়কের ঘোষণার পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের দিকে গেলে সেখানে থাকা আনসার সদস্যদের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে অল্প কিছু শিক্ষার্থী সচিবালয় এলাকায় আসলে আনসার সদস্যরা তাদের ওপর হামলা চালান। এসময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।

এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা কিছুটা পিছু হটে শিক্ষা চত্বরে অবস্থান নেন। পরে চারদিক থেকে আরও সহস্রাধিক শিক্ষার্থী এসে আনসার সদস্যদের ধাওয়া দেন। এ সময় তাদের বেরিয়ে যাওয়ার জন্য দুটি পথও খোলা রাখা হয়। ধাওয়া খেয়ে আনসারদের একটি অংশ জিপিও হয়ে, আরেকটি অংশ প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে চলে বেরিয়ে যান। অবশ্য তখনও কিছু সংখ্যক আনসার সদস্য সচিবালয়ের ২ নম্বর গেটের সামনে আটকা পড়েন। সেনাবাহিনীর সদস্য ও শিক্ষার্থীদের একটি অংশই তাদের রক্ষার চেষ্টা করেন।

রাত ১০টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম ফেসবুক লাইভে বলেন, সচিবালয় এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যারা রাস্তায় ছিলেন তারা সবাই রাজু ভাস্কর্যের সামনে আসেন। আমরা এখানে অবস্থান করবো। আর কেউ সচিবালয়ের দিকে যাবেন না।

সাড়ে ১০টার দিকে গেট খুলে দিলে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসেন অবরুদ্ধ উপদেষ্টা ও সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গেটের সামনে তাদের স্বাগত জানান শিক্ষার্থীরা। পরে পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণের নেয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ।