এক বছর পর লাঞ্ছনার বিচার চাইলেন কুবি শিক্ষক

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আইন বিভাগের একাডেমিক কাউন্সিলে সহকারী অধ্যাপক মু. আলী মুর্শেদ কাজেম কর্তৃক হামলা ও লাঞ্ছিত হওয়ায় ঘটনায় বিচারের দাবিতে একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন একই বিভাগের ভুক্তভোগী শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মো. আবু বকর ছিদ্দিক।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মুজিবুর রহমান মজুমদারের কাছে এই অভিযোগ পত্র জমা দেন বলে নিশ্চিত করেছেন রেজিস্ট্রার নিজেই।

অভিযোগপত্রে মো. আবু বকর ছিদ্দিক উল্লেখ করেন, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আইন বিভাগের একাডেমিক কমিটির ১২১তম সভা চলাকালীন আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মু. আলী মুর্শেদ কাজেম কর্তৃক আমি সন্ত্রাসী হামলার স্বীকার হই এবং শারীরিকভাবে চরম লাঞ্ছিত হই। কোর্স বণ্টন নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে সেই শিক্ষক আমার বাবা-মা তুলে গালাগাল করে এবং আমি প্রতিবাদ করলে সে চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার মুখে প্রচণ্ড আঘাত করে। আঘাতের ফলে আমার চশমা ভেঙে যায় এবং মুখে কালশিটে পড়ে যায়। বিষয়টি সম্পর্কে ওই দিনই সাবেক উপাচার্য ও আইন অনুষদের সাবেক ডিন ড. এএফএম আব্দুল মঈনের সাথে দেখা করে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু উক্ত শিক্ষক তখন উপাচার্যপন্থি হওয়ায় এবং উপাচার্যের আস্থাভাজন হওয়ায় বিষয়টি ওখানেই মিটমাট করে ফেলতে উপাচার্য আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেন।

পরবর্তীতে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শিক্ষকদের মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে কেন পত্রিকায় সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশ করল, এটা নিয়ে আমার ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন। আমি উপ-উপাচার্য মহোদয়ের সাথে মিলে ষড়যন্ত্র করছি বলে মিথ্যা অভিযোগ দেন এবং উক্ত ঘটনায় লিখিত অভিযোগ না দিতে বলেন। লিখিত অভিযোগ দিলে আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের হুমকি দেন।

অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, আলোচনার এক পর্যায়ে বিষয়টির বিচারের ভার আমি তার ওপর ছেড়ে দিলে তিনি রাগান্বিত হয়ে মিটিং ছেড়ে উঠে যান এবং বিষয়টি বিভাগের একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ে মীমাংসিত হয়ে গেছে মর্মে রেজল্যুশন নিয়ে আসতে বলেন। উপাচার্যের এমন মন্তব্যে আমি হতবম্ব হয়ে যাই এবং বিষয়টি সেভাবেই অমীমাংসিত থেকে যায় যেটি তৎকালীন উপাচার্যের বিচারহীনতার মানসিকতার প্রতিফলন ছিল।

এ অবস্থায় বিভাগের একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ে একজন জুনিয়র শিক্ষক কর্তৃক এমন ন্যক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলা ও লাঞ্ছিতের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার করার অনুরোধ জানাচ্ছি। এ ছাড়া উক্ত শিক্ষক কর্তৃক এর আগে ও বেশ কয়েকবার আমি হেনস্তার শিকার হয়েছি এবং তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছিল।

অভিযোগের ব্যাপারে মো. আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, আমি আমার সাথে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে বিচার পাওয়ার জন্য অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি।

গত বছরের ঘটনা এখন কেন অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সে সময় সাবেক উপাচার্য আবদুল মঈন আইন বিভাগের ডিন ছিলেন, যার কারণে আমাকে এই ঘটনা না বাড়াতে নানা রকমের হুমকি দিয়েছিলেন। তাই আমি অভিযোগপত্র জমা দিতে পারিনি। তা ছাড়া অভিযোগপত্র যেন জমা না দিই, এ জন্য তিনি অনেকভাবে আমাকে শাসিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মুজিবর রহমান মজুমদার বলেন, আমি অভিযোগপত্রটা পেয়েছি। যেহেতু বর্তমানে উপাচার্য পদ শূন্য, সে ক্ষেত্রে নতুন উপাচার্য নিয়োগ হলে উপাচার্যের সাথে অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলবো।