এসএমই খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর দাবি ঢাকা চেম্বারের

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটি বলেছে, এসএমইদের অর্থায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কিছু স্কিম বা কর্মসূচি রয়েছে, যেগুলোর কার্যক্রম বেগবান করতে পারলে এসএমই খাতে অর্থায়ন প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ডিসিসিআইর পক্ষ থেকে কথাগুলো বলা হয়। ডিসিসিআই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির সভাপতি আশরাফ আহমেদ। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার ও মো. হাবিবুর রহমান এবং ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলীসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ডিসিসিআই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এই সাক্ষাতে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, সুদের হার বাড়লে বিশেষ করে এসএমই খাতে ঋণপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঋণ ও বৈদেশিক ঋণ প্রক্রিয়া সহজ করা এবং ব্যাংকগুলোয় ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর অনুরোধ করেন।

এসএমইদের ঋণপ্রাপ্তিতে বিদ্যমান সুদের চাপ কীভাবে আরও কামানো যায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান ঢাকা চেম্বারের সভাপতি। নীতি সুদহার বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়ানো একটি প্রচলিত প্রক্রিয়া; তবে এটি সাময়িক সময়ের জন্য প্রযোজ্য বলে আমরা মনে করি।

তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত থাকুক, এটা আমাদেরও প্রত্যাশা। কারণ, মূল্যস্ফীতির ফলে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কর্মকাণ্ড পরিচালনার ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া ব্যাংকের মন্দ ঋণের পরিমাণ কমানো সম্ভব হলে নীতি সুদহারও হ্রাস পাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে দেশের আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এটিকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, এসএমই খাতের বিকাশের লক্ষ্যে সুদের হার বৃদ্ধির চাপ মোকাবিলায় ও ঋণের প্রবাহ বজায় রাখতে সহায়তা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, মূল্যস্ফীতি ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হলে, নীতি সুদহার ও ব্যাংকঋণের সুদহারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হবে। ব্যাংকের আমানত সংগ্রহে প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে (দুই অংকে) তোলা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

গভর্নর এসএমইদের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি সুবিধাগুলো আরও সচল করার বিষয়ে জোর দেন। একই সঙ্গে তিনি বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে সরকারি ঋণগ্রহণের পরিমাণ সীমিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি ট্রেড ক্রেডিট বা বাণিজ্যিক ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের পেমেন্ট হিস্ট্রি বা অর্থ পরিশোধের ইতিহাস পর্যালোচনা এবং তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, শিগগিরই একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হবে, যার ভিত্তিতে আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনয়নে প্রয়োজনীয় রোডম্যাপ তথা পথনকশা প্রণীত হবে। এ ছাড়া তিনি নতুন বিনিয়োগকারীদের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন।