Bangladesh: জামায়াতে ইসলামীর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

ঢাকা: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিগত শেখ হাসিনার শাসন কালে  দেশের বৃহত্তম ইসলামী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দল ও এর সব সহযোগী সংগঠনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সন্ত্রাস ও হিংসামূলক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না পাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এতে আরো বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো ‘কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে’ জড়িত নয়।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর চার দিন আগে গত ১ অগস্ট তার সরকার এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে দল ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সে সময় শেখ হাসিনার সরকার জামায়াতের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে হিংসা বিক্ষোভে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছিল।

সরকারি চাকরিতে বিতর্কিত কোটার বিরোধিতা করে গত জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। আদালত কোটা বাতিল করলেও সেই বিক্ষোভ শেখ হাসিনার উৎখাতের আন্দোলনে রূপ নেয়।

উচ্চ আদালতের রায়ের পর ২০১৩ সালে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জামায়াত। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ওই রায় বহাল রেখে ২০২৩ সালে জামায়াতের আপিল খারিজ করে দেন।

১৯৪১ সালে  ব্রিটিশ ভারতে সৈয়দ আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয় চারবার। ১৯৫৯ ও ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানে এবং ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে নতুন সংবিধান প্রণয়নের পর অন্যান্য ধর্মীয় দলের সঙ্গে জামায়াতকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

জামায়াত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একটি প্রধান মিত্র ছিল, ২০০১-০৫ সালে এর সদস্যরা জোট সরকারে মন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। বুধবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলকে নিষিদ্ধের বিরোধিতা করেন। আমরা কোনও রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই। সংবিধান জনগণকে যে কোনো দলকে সমর্থন করার অনুমতি দেয়, তবে এটি অবশ্যই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শেখ হাসিনার সরকার বেশ কয়েকজন জামায়াত নেতাকে অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করেছিল। ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে জামায়াতে আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ পাঁচ নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

এদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রধান শফিকুর রহমান পিটিআইকে বলেছেন যে তার দল ভারতের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও স্থিতিশীল সম্পর্ক চায়, তবে নয়াদিল্লির প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য তার পররাষ্ট্রনীতি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। তিনি আরও বলেন, জামায়াত ভারত-বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে সমর্থন করে কিন্তু এটাও চায় বাংলাদেশ পাকিস্তান, চিন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দৃঢ় ও ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখুক।

রহমান দাবি করেছেন যে জামায়াতকে ‘ভারত-বিরোধী’ দল হিসাবে ভারতের ধারণা ভুল এবং দলটি কোনও দেশের বিরুদ্ধে নয়। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশপন্থী এবং বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় একান্তভাবে আগ্রহী।