নদীখননের বালুতে ৩ বছর বন্ধ খালের মুখ, কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বাঙালি নদীর খনন করা বালু ফেলে তিন বছর আগে একটি খালের মুখ বন্ধ করা হয়। এতে স্থানীয় কৃষকদের কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। মাছ শিকার বন্ধ রয়েছে জেলেদের। স্থগিত হয়ে আছে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে শোলারতাইড় সেতুর নির্মাণকাজ। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ এবং ভুক্তভোগীরা বিগত সরকারের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সম্প্রতি খালটির পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকায় ক্ষতির কথা তুলে ধরে উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সুজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে জানা গেছে, সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের কুতুবপুর বাজারের পাশ থেকে বাঁশহাটা বাঙালি নদী পর্যন্ত খালটি শত বছরের পুরনো। আগে খালটি পানি নিষ্কাষণের জন্য নালার মতো ছিল। পরবর্তী সময়ে যমুনা নদীর ভাঙনের ফলে খালে রূপান্তর হয়। বর্ষার সময় উপজেলার কুতুবপুর, চন্দনবাইশা, ভেলাবাড়ী ও কামালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বৃষ্টির পানি এই খাল দিয়ে বাঙালি নদীতে যায়। খাল দিয়ে নৌকায় কুতুবপুর বাজার থেকে সারিয়াকান্দি সদর, গোলাবাড়ী, পোড়াদহসহ বিভিন্ন পথে মানুষ যাতায়াত করতো।

বাঙালি নদীর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ থাকায় বর্ষার সময় প্রচুর দেশি মাছ এ খালে আসতো। খালের ওপর নির্ভর করে কুতুবপুর বাজারের পেছনে জেলেপল্লি গড়ে ওঠে। জেলেরা শিকার করা মাছ বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এ ছাড়া কুতুবপুর, শোলারতাইড়, কালারতাইড়, বাঁশহাটা, কাজলা, বড়ইকান্দি, চন্দনবাইশাসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ খালে জাল দিয়ে ও নানাভাবে মাছ ধরতেন। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে উপজেলার সাত গ্রামের মানুষ এ খালে গোসল করতেন। গৃহপালিত প্রাণীকেও গোসল করাতেন। প্রায় ৫০০ একর এলাকাজুড়ে বোরো বীজতলা তৈরি করা হতো। এ ছাড়া প্রায় ১০০ একর এলাকায় মিষ্টি আলু, সরিষা, গম, কালাই, রসুন, পেঁয়াজ প্রভৃতি রবি ফসল আবাদ হতো।

এদিকে, গত প্রায় তিন বছর আগে বাঙালি নদী খননের সময় ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের বাঁশহাটা গ্রামে বালু ফেললে খালের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় কৃষকরা খননকারী প্রতিষ্ঠানকে বাধা দিয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি পাইপ দিয়ে পানি বের করে দেওয়ার কথা বললেও পরবর্তী সময়ে তা করেনি। ফলে খালের পানি বাঙালি নদীতে না পড়ে খালেই আটকে যায়। পরে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিলেও এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও এখনও সুরাহা পাননি কৃষকরা।

এদিকে, গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সঙ্গে নিয়ে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা কর্মকর্তা সবুজ কুমার বসাক সেখানে অভিযান পরিচালনা করলেও তা ব্যর্থ হয়।

কুতুবপুর ইউনিয়নের শোলারতাইড় গ্রামের কৃষক আবদুল মালেক বলেন, ‘খালের বন্ধ মুখ খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েও লাভ হয়নি। খালের মুখ খুলে না দেওয়ায় এলাকার প্রায় ৩০০ বিঘা জমির আমন ধান নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া ২০ হাজার বিঘা জমিতে বেরো ধান চাষ করা সম্ভব হয় না।’

চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘কৃষকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। খালের মুখ বন্ধ থাকায় বিশাল এলাকার মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এতদিন প্রতিকার না হওয়ায় সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘কৃষকদের সুবিধার্থে দ্রুত খালের মুখ খুলে দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’