ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমাদের ভূমিকা, পারমাণবিক নীতি পরিবর্তন করছে রাশিয়া

ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর ভূমিকার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া তাদের পারমাণবিক নীতিতে পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছে। রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) এই ঘোষণা দেন বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

বর্তমান পারমাণবিক নীতি ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এক আদেশে নির্ধারিত হয়েছিল। বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী, শত্রুর পারমাণবিক আক্রমণ বা কোনও প্রচলিত হামলায় রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে পড়লে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।

রাশিয়ার কিছু সামরিক বিশ্লেষক পুতিনকে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সীমা কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন। যাতে রাশিয়ার পশ্চিমা শত্রুরা ‘সতর্ক’ হয়। পুতিন জুন মাসে বলেছিলেন, পারমাণবিক নীতি একটি ‘সক্রিয় নীতি’, যা বিশ্বের ঘটনার ওপর নির্ভর করে পরিবর্তন হতে পারে। রিয়াবকভের সাম্প্রতিক মন্তব্যে এই নীতিতে পরিবর্তন আনার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, রিয়াবকভ বলেছেন, এই কাজটি উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে এবং সংশোধন আনার বিষয়ে স্পষ্ট ইচ্ছা রয়েছে। ইউক্রেন সংঘাতে পশ্চিমা প্রতিপক্ষদের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত জড়িত।

মস্কো পশ্চিমা দেশগুলোকে ইউক্রেনকে একটি প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর অভিযোগ করেছে। তাদের দাবি, এর লক্ষ্য রাশিয়াকে কৌশলগতভাবে পরাজিত এবং দেশটিকে টুকরো টুকরো করা।

যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্ররা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা ইউক্রেনকে রাশিয়ার ঔপনিবেশিক ধাঁচের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রক্ষার জন্য সহায়তা করছে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক আগ্রাসনের প্রথম দিনেই পুতিন হুমকি দিয়ে বলেছিলেন যে, কেউ যদি এতে হস্তক্ষেপ বা হুমকি দেয় তবে তারা ‘ইতিহাসে আগে কখনও না দেখা পরিণতি’ ভোগ করবে। এরপর তিনি আরও কয়েকবার পারমাণবিক হুমকি দিয়েছেন। বেলারুশে রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

তবে, যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্ররা ইউক্রেনকে ট্যাংক, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহের মতো সামরিক সহায়তা বাড়িয়েছে। যা যুদ্ধের শুরুতে অকল্পনীয় ছিল।

গত মাসে ইউক্রেন পশ্চিমা সীমান্তে হাজার হাজার সেনা নিয়ে রুশ ভূখণ্ডে ঢুকে মস্কোকে চমকে দেয়। রাশিয়া এখনও এই ইউক্রেনীয় হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, এই অপারেশন পুতিনের ‘রেড লাইনকে’ উপহাস করেছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে আরও আধুনিক পশ্চিমা অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার গভীরে হামলা করার অনুমতি দিতে চাপ দিচ্ছেন।

রবিবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলো অত্যধিক মাত্রা পার করছে এবং রাশিয়া নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য যা কিছু করার দরকার তা করবে।

রিয়াবকভ বলেননি কবে নতুন পারমাণবিক নীতি প্রস্তুত হবে। তিনি বলেন, এই কাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ একটি জটিল প্রশ্ন। কারণ আমরা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে কথা বলছি।

রাশিয়ার হাতে বিশ্বের যেকোনও দেশের চেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। পুতিন মার্চ মাসে বলেছিলেন যে, মস্কো পারমাণবিক যুদ্ধের জন্য ‘সামরিক-প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে’ প্রস্তুত। তবে তিনি এটিও বলেছিলেন যে, পারমাণবিক সংঘাতের কোনও তাড়া নেই এবং রাশিয়া ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজন কখনও অনুভব করেনি।