বিএনপির নামে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে দিনে ৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজি

দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে আবারও শুরু হয়েছে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়। আগে আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের নাম ভাঙিয়ে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকগুলো থেকে চাঁদা আদায় করা হতো। বর্তমানে বিএনপি নেতাদের নামে প্রতি ট্রাক থেকে ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হচ্ছে। এতে প্রতিদিন অন্তত পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা আদায় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এরই মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি বন্ধে সরব হয়েছেন খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। সাত দিনের মধ্যে চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় না আনলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তারা। চাঁদাবাজি বন্ধসহ জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এক ঘণ্টা দোকান বন্ধ রেখে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন ব্যবসায়ীরা।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাশেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খাতুনগঞ্জে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ ট্রাক পণ্য নিয়ে আসা-যাওয়া করে। এর মধ্যে কিছু আসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আবার কিছু আসে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে। আবার পণ্য নিয়ে খাতুনগঞ্জ থেকে বিভিন্ন জেলা যায়। এসব গাড়ি প্রবেশ এবং বের হওয়ার সময় এখন বিএনপি নেতাদের নাম ভাঙিয়ে ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। ট্রাকচালকরা আমাদের এসব কথা জানিয়েছেন। চাঁদাবাজির কারণে আবারও পণ্যের দাম বাড়ছে। নিজাম কাজলের নেতৃত্বে এই চাঁদাবাজি হচ্ছে। নিজেকে বিএনপির নেতা পরিচয় দিচ্ছেন। নিজামের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে ব্যবসায়ীরা বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য নিয়ে কোনও ট্রাক খাতুনগঞ্জে এলে পথে পথে পৌরসভার কর, পুলিশের নামে এবং রাজনৈতিক নেতাদের নামে চাঁদা আদায় হতো। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কিছুদিন চাঁদাবাজি বন্ধ ছিল। গত কিছুদিন ধরে আবারও চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বহদ্দারহাট থেকে বাকলিয়া রাজাখালী পর্যন্ত এলাকায় পণ্য নিয়ে আসা ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। ট্রাকগুলো কোথাও দাঁড়ালে তাদের চাঁদা দিতে হয়। একইভাবে নগরীর কোতোয়ালি থানার জেলরোড দিয়ে কোনও পণ্যবাহী ট্রাক ঢুকলে চাঁদা দিতে হয়।’

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেক বছর ধরে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নাম দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছিল। আগে আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী ও পুলিশ প্রশাসনের নামে এই চাঁদা আদায় করা হতো। ৫ আগস্টের পর থেকে এক সপ্তাহ চাঁদা আদায় বন্ধ ছিল। গত কয়েকদিন ধরে আবারও শুরু হয়েছে। এবার চাঁদা আদায়কারীরা বিএনপি নেতাদের নামে তুলছেন। মূলত চাঁদা আদায়কারীরা একই, শুধুমাত্র নাম পরিবর্তন করে চাঁদা তুলছেন। বিষয়টি নিয়ে আগেও আমরা প্রতিবাদ করেছি। জড়িতদের তালিকা প্রশাসনকে দেওয়া হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থায় নেওয়া হয়নি।’

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২১ সালে খাতুনগঞ্জে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়ে জড়িতদের একটি নামের তালিকা দেওয়া হয়েছিল সিএমপি কমিশনারের কাছে। ওই তালিকায় ছিল খোরশেদ আলম, নিজাম কাজল, মহিউদ্দিন জনি, মিনহাজ উদ্দিন রনি, নজরুল ইসলাম, বেলাল হোসেন বেলাল, জেবল হোসেন, কামাল উদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ মুন্সি, আরিফ মিয়া, নুরুল হক ও মো. মিলন নামে ব্যক্তিদের নাম। এখন তারা ও তাদের সহযোগীরাই বিএনপির নামে চাঁদাবাজি করছেন।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ও চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনামুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কিছু চিহ্নিত চাঁদাবাজ এখন আবারও ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করছে। আমরা এর প্রতিবাদ করছি। আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি, চাঁদাবাজ যে রাজনৈতিক দলের হোক, তাদের প্রতিহত করা হবে। সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীর স্থান এখানে হবে না। চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে সাত দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে যদি তাদের গ্রেফতার করা না হয়, তাহলে আমরা ব্যবসায়ীরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো।’

চাঁদাবাজি বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম ওবায়েদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে এ ধরনের কোনও অভিযোগ আমরা এখনও পাইনি। পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’