আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছে মানুষ, মৃত্যু ৭১

সার্বিকভাবে দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরছেন মানুষ। দুর্গত জেলাগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে। তবে বন্যায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৭১ জন।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম ও মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।

অতিরিক্ত সচিব জানান, বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব রোধ করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। এছাড়া, দেশে সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত রয়েছে।

দেশের বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলো হলো—ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার।

তিনি জানান, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কক্সবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। মৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে এবং ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

কে এম আলী রেজা সংবাদ সম্মেলনে জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোক সংখ্যা ৫০ লাখ ২৪ হাজার ২০২ জন। এদের মধ্যে মৃতের সংখ্যা মোট ৭১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৫, নারী ৭ ও শিশু ১৯ জন। জেলাভিত্তিক মৃত্যুর সংখ্যা কুমিল্লায় ১৯, ফেনীতে ২৮, চট্টগ্রামে ৬, খাগড়াছড়িতে ১, নোয়াখালীতে ১১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১, লক্ষ্মীপুরে ১, মৌলভীবাজারে ১ ও কক্সবাজারে ৩ জন। এছাড়া মৌলভীবাজারে একজন নিখোঁজ রয়েছেন। বর্তমানে মোট ৫ লাখ ৮২ হাজার ১৫৫ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় প্রদানের জন্য মোট ৩ হাজার ৬১২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা আছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মোট ২ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯৬ জন লোক এবং ৩১ হাজার ২০৩টি গবাদিপশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য মোট ৪৬৯টি মেডিক্যাল টিম চালু রয়েছে।

কে এম আলী রেজা আরও জানান, সশস্ত্র বাহিনী বন্যাদুর্গত এলাকায় ৩ লাখ ৯১ হাজার ১৮৬ প্যাকেট ত্রাণ, ২২ হাজার ৪১০ প্যাকেট রান্না করা খাবার বিতরণ করেছে। বন্যাদুর্গত এলাকা থেকে মোট ৪২ হাজার ৯৫৭ জনকে উদ্ধার এবং ৫০ হাজার ২৫৭ জনকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া, হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ১৫৩ জনকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী পরিচালিত মোট ২৪টি ক্যাম্প এবং ১৮টি মেডিক্যাল টিম বন্যা উপদ্রুত এলাকায় চিকিৎসাসেবা প্রদান করছে। এছাড়া খাবার পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, কাপড়, ওষুধ, বেবি ফুড, স্যানিটারি আইটেম ইত্যাদি বিতরণ করা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক কর্তৃক সংগৃহীত মোট ১ লাখ ৮৬ হাজার ১০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, কাপড় ও পানি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের (ডিডিএম) মাধ্যমে বন্যাকবলিত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। ডিডিএম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা রয়েছে। এতে তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে। এছাড়া, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থসহায়তা প্রদানের জন্য আগ্রহী ব্যক্তিরা প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল, সোনালী ব্যাংক করপোরেট শাখা, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, ০১০৭৩৩৩০০৪০৯৩ নম্বরে পাঠাতে পারবেন। খবর: বাসস