উৎকর্ষ আনন্দ
কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ তাঁর কার্যকালে আর্থিক অনিয়মের তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন।
২৭ অগস্ট সন্দীপ ঘোষ পিটিশন দাখিল করলেও আগামী ৬ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে তার শুনানি হবে। তবে শুনানির আগেই ২ সেপ্টেম্বর এই মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই। ৯ আগস্ট আরজি কর হাসপাতালে ৩১ বছর বয়সি এক চিকিৎসককে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা নিয়ে ব্যাপক জনরোষের পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সন্দীপ ঘোষ তাঁর আবেদনে যুক্তি দিয়েছিলেন যে কলকাতা হাইকোর্ট তাকে ন্যায্য শুনানির সুযোগ না দিয়েই ২৩ আগস্ট তদন্তভার সিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করেছে, যা প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের নীতিকে লঙ্ঘন করেছে। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে উচ্চ আদালত ভুলভাবে তাকে শুনানি থেকে বাদ দিয়েছে, উল্লেখ করে যে তিনি মূল রিট পিটিশনে প্রয়োজনীয় বা যথাযথ পক্ষ ছিলেন না। সন্দীপ ঘোষ জোর দিয়ে বলেন যে তদন্ত স্থানান্তরিত করার আগে আদালতের তার পক্ষ বিবেচনা করা উচিত ছিল, কারণ ফলাফলটি সরাসরি তার অধিকারকে প্রভাবিত করেছে।
ধর্ষণ ও খুনের ফৌজদারি তদন্তের সঙ্গে আর্থিক অনিয়মকে যুক্ত করার হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকেও চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন সন্দীপ ঘোষ। তিনি বলেন, দুটি মামলা পৃথক এবং আদালত আর্থিক তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইকে দিয়ে ভুল করেছে কারণ সংস্থাটি ইতিমধ্যেই ফৌজদারি মামলার তদন্ত করছে।
প্রধান বিচারপতি ধনঞ্জয় ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ ৬ সেপ্টেম্বর সন্দীপ ঘোষের আবেদনের শুনানি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই বেঞ্চ ডাক্তারের ধর্ষণ ও হত্যার বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত কার্যক্রমও তদারকি করছে এবং সংশ্লিষ্ট তদন্তের উপর নজর রাখছে।
সোমবার সিবিআইয়ের নিজাম প্যালেসের অফিসে গ্রেফতার হওয়ার আগে টানা পনেরো দিন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে বিধিভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে।
সন্দীপের বিরুদ্ধে গবেষণার জন্য অবৈধভাবে মৃতদেহ ব্যবহার, বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের অননুমোদিত বিক্রয় এবং যথাযথ দরপত্র ছাড়াই ঠিকাদারি দেওয়ার মতো বেশ কয়েকটি আর্থিক অনিয়ম সহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
সিবিআইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের মামলাও দায়ের করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। পাশাপাশি, তাঁর বিরুদ্ধে দুটি এফআইআর দায়ের করেছে কলকাতা পুলিশ।
ঘটনার একদিন পর কলকাতা পুলিশের এক সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করে ১৩ অগস্ট সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয় পুলিশ।
কলকাতা হাইকোর্ট ২৩ অগাস্ট সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়৷ অভিযোগ ওঠার এক বছর পর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠনের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমালোচনা করে তারা৷ মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট আখতার আলি সন্দীপ ঘোষের আর্থিক অসদাচরণের অভিযোগের ইডি তদন্তের আর্জি জানিয়েছিলেন। আলি উল্লেখ করেছিলেন যে ডাক্তারের মর্মান্তিক মৃত্যুর পরেই এসআইটি গঠিত হয়েছিল।
উচ্চ আদালত তার সিদ্ধান্তকে ন্যায়সঙ্গত করে তুলেছে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সঙ্গে অপরাধের স্থানের ‘আপাত যোগসূত্র’-এর কথা উল্লেখ করে, যার ফলে একটি একক সংস্থার সমন্বিত তদন্তের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
আদালত নির্দেশ দিয়েছে, অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হোক। একাধিক সংস্থার মধ্যে তদন্তকে বিভক্ত করার ফলে অদক্ষতা, বিলম্ব এবং তথ্যের সম্ভাব্য ভুল ব্যাখ্যা হতে পারে, যার ফলে কার্যকর প্রয়োগকে হ্রাস করা যায়। সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দিলে ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট।