বাড়তি দামেই এলপিজি, পেছনে বেসরকারি কোম্পানি

তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) বাণিজ্যে এখনও বেসরকারি কোম্পানির প্রভাবের বলয়মুক্ত হওয়া যায়নি। সরকারিভাবে দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়ার সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও বাজারে এর কোনও প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। তবে আগামীকাল বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দেশের প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে নতুন করে নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রির জন্য অভিযান পরিচালনার কথা জানিয়ে চিঠি দেবে বলে জানিয়েছে বিইআরসি।

সোমবার (২ সেপ্টম্বর) সারা দেশে সেপ্টেম্বর মাসের জন্য ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৪২১ টাকা। এই দাম সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর করার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু আজ মঙ্গলবার (৩ সেপ্টম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন দোকানে খবর নিয়ে জানা গেছে বাজারে বসুন্ধরার ১২ কেজি এলপিজির সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৫০ টাকায়। আর অন্য এলপিজির দাম গড়ে বোতল প্রতি ১ হাজার ৫০০ টাকা।

অর্থাৎ সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চাইতে বাজারে এলপিজির দাম কোম্পানি ভেদে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি।

খুচরা দোকানদাররা বাড়তি দাম নেওয়ার বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে নারাজ। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে বলছেন, তাদের কোম্পানি থেকেই বেশি দামে এলপিজি কিনতে হচ্ছে। এসব বিষয়ে এর আগে পত্রপত্রিকাতে কথা বলায় তাদের এলপিজি সরবরাহ করার ক্ষেত্রে নানা রকম হয়রানি করা হয়েছে।

আগে এলপিজি ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো করেই বাজারে পণ্যের দাম নির্ধারণ করতো। কিন্তু বাড়তি দাম নেওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের মাধ্যমে দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু করে। সেই হিসেবে সরকারিভাবে দাম নির্ধারণ হচ্ছে সাড়ে তিন বছর ধরে। কিন্তু দাম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের পক্ষে খুব জোরালো কোনও পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সাধারণ মানুষ মনে করেছিল ক্ষমতার পট পরিবর্তনের মাধ্যমে এলপিজি বাণিজ্যের মূল হোতারাও ধরাশায়ী হবেন। কিন্তু এলপিজি বাণিজ্য আগের মতোই রয়ে গেছে। এতে করে বাড়তি দাম দিয়েই এলপিজি কিনতে হচ্ছে গ্রাহককে।

রাজধানীর কাঁঠাল বাগানের একজন ব্যবসায়ী বলেন, আমরা যেমন দামে কিনবো তেমন দামেই এলপিজি বিক্রি করবো। এখানে আমরা কতটা মুনাফা করছি তা সরকার আগে দেখতে হবে। আমরা কী দামে কিনছি আর কী দামে বিক্রি করছি সেটা দেখলেই প্রমাণ হবে প্রকৃতপক্ষে কারা এলপিজির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এখন কথা হচ্ছে আগে রাজনৈতিক সরকার ছিল, তাদের বিরুদ্ধে ম্যানেজ করে সব কিছু চালানোর অভিযোগ ছিল। কিন্তু এখন কারা এসব নিয়ন্ত্রণ করছে সেটি খুঁজে বের করতে হবে।

উত্তর ধানমন্ডির এক বিক্রেতা জানান, তাদের বেশিরভাগ সিলিন্ডার ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। এরমধ্যে বিএম, ফ্রেশ বিক্রি করছেন তারা। তবে বসুন্ধরার এলপিজির দাম একটু বেশিই। তাদের ১২ কেজি সিলিন্ডার বিক্রি করেন ১ হাজার ৬৫০ টাকায়।

এদিকে পশ্চিম ধানমন্ডির আরেক বিক্রেতা জানান, তাদের বিএম, ওমেরা, এলপিজির দাম ১ হাজার ৫০০ টাকা, বেক্সিমকোর এলপিজি তারা বিক্রি করছেন ১ হাজার ৬০০ টাকায়।

বনশ্রীর বাসিন্দা রুবায়াত মামুন বলেন, বাসায় গ্যাসের লাইন থাকলেও গ্যাস থাকে না। প্রায় সারা দিনই তাই বাধ্য হয়ে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করি। গত কয়েক মাস ধরেই ১২ কেজি সিলিন্ডার (পেট্রোনাস) ১ হাজার ৫০০ টাকা করেই কিনছি। কিন্তু কাল নিউজে দেখলাম বিইআরসি দাম নির্ধারণ করেছে ১ হাজার ৪২১ টাকা। তাহলে এই যে বাড়তি দাম আমরা দিচ্ছি সেটি দেখবে কে? আগের সরকারও বিষয়টি সমাধান করেনি। এবার এই সরকার কোনও পদক্ষেপ নেবে কিনা সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

এদিকে জানতে চাইলে বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি। আগামীকাল প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। চিঠিতে আমাদের নির্ধারিত দামের তালিকাও দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে ভোক্তা অধিকারকে সঙ্গে নিয়ে তারা যেন তাদের অভিযান পরিচালনা শুরু করেন। পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু আইনের ধারা তারা মেনে চলে, সেখানে বিইআরসির কোনও ধারা যুক্ত নেই। আমরা সেটি যুক্ত করার চেষ্টা করছি। যাতে মোবাইলে কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমেই নির্ধারিত দামে এলপিজি ব্যবহার না করলেই তারা জরিমানা করতে পারে। এজন্য আমরা খুব শিগগির আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও কথা বলবো।

প্রসঙ্গত, সরকারি হিসেবে ২০০৯ সালে এলপিজি গ্যাসের চাহিদা ছিল ৪৭ হাজার টন, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ টনের ওপরে।

প্রাকৃতিক গ্যাসের সংযোগ বন্ধ, শিল্পে বাড়ছে এলপিজির ব্যবহার, পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে অটো গ্যাস এবং নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হওয়ার কারণে এই গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। ফলে এখনই সময় দাম নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেওয়ার।