রক্ষকই ভক্ষক!‌ ব্যবসায়ীর গাড়ি থেকে কোটি টাকা ডাকাতি, গ্রেফতার পুলিশেরই টিম

পুলিশই ডাকাত! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। ক্রাইম ব্রাঞ্চের পুলিশ পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকে গাড়ি থামিয়ে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোটি টাকার উপর ডাকাতি করল পুলিশের টিম। তদন্তে নেমে এক এএসআই, সিআইডির বম্ব স্কোয়াডের কনষ্টেবল –সহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে চরম আলোড়ন ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গাপুরে। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন সাসপেন্ড হওয়া এক পুলিশকর্মীও। যদিও লুটের টাকা এখনও উদ্ধার করা যায়নি।

এদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, আসানসোলের এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে নয়াদিল্লির বাসিন্দা পেশায় রেলের ঠিকাদার মুকেশ চাওলার সঙ্গে ব্যবসা করবে বলে সম্পর্ক গড়ে তোলে দুর্গাপুর থানার এএসআই অসীম চক্রবর্তী, সিআইডির বম্ব স্কোয়াডের কনষ্টেবল চন্দন চৌধুরী–সহ পুলিশের চাকরি থেকে বহিষ্কৃত অফিসার মৃত্যুঞ্জয় সরকার। নতুন ব্যবসার কারণে তাই কথা বলতে মুকেশবাবু নয়াদিল্লি থেকে আসানসোলের সীতারামপুরে চলে আসেন। ব্যবসার কথাবার্তা পাকাও হয় উভয়ের মধ্যে। এরপর এক কোটি টাকা নগদ নিয়ে কলকাতার দিকে যাচ্ছিলেন ওই ব্যবসায়ী। ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্গাপুর থানা এলাকায় তাঁর গাড়ি আটকানো হয়। সেখানে ছিলেন পুলিশের উর্দি পরা দু’জন। ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, তাঁর পরিচয়, গাড়ির কাগজপত্র দেখার অছিলায় এক কোটি টাকা জোর করে কেড়ে নেন অভিযুক্তরা।

আরও পড়ুন:‌ দুর্গাপুজোর সময়ও কাজ করার নির্দেশ দিলেন শুভেন্দু, আরজি কর নিয়ে ঢালাও কর্মসূচি

অন্যদিকে নিজেদের ক্রাইম ব্রাঞ্চের পুলিশ বলে গাড়ি থেকে নামতে বলা হয় ব্যবসায়ী ব্যক্তিকে। মুকেশবাবুকে চমকে তারা টাকা নিয়ে নেয়। ভয়ে কাঁপতে থাকেন মুকেশবাবু। টাকা নিয়ে এলাকা ছাড়ে তারা। রাতেই মুকেশবাবু দুর্গাপুর থানার পুলিশের দ্বারস্থ হন। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনার সুনীলকুমার চৌধুরী ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদীকে এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেন। তখন তদন্তে নেমে পিয়ালা কালীমন্দিরে কাছে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। আর সেই ফুটেজ দেখেই প্রথম একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জেরা করতেই ধরা পড়ে যায় বাকিরা।

ওই ফুটেজ দেখে তাজ্জব বনে যান পুলিশ কর্তারা। আর এক মুহূর্ত দেরি না করে শুরু করে দেন গ্রেফতার। এই বিষয়ে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা বলেন, ‘‌এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর কারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত আছে তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। কয়েকদিনের মধ্যেই পুরো গ্যাং আমরা ধরে ফেলব। তখন সমস্ত বিষয়টি জানানো হবে।’‌ ধৃত ৬ জন হল—অসীম চক্রবর্তী, দুর্গাপুর থানার এসআই, চন্দন চৌধুরী, সিআইডি কনস্টেবল, মৃত্যুঞ্জয় সরকার বরখাস্ত পুলিশ কর্মী, সুরজ কুমার রাম, মহম্মদ আসিফ এবং সুভাষ শর্মা।