মালয়েশিয়ায় ইসলামি প্রতিষ্ঠানের পরিচালিত আশ্রম থেকে ৪ শতাধিক শিশু উদ্ধার

মালয়েশিয়ায় একটি ইসলামি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালিত একাধিক আশ্রম থেকে ৪ শতাধিক শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০১ জন ছেলে ও ২০১ জন মেয়ে শিশু রয়েছে। আশ্রমগুলোতে শিশুরা যৌন নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ এই অভিযান পরিচালনা করে। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) তাদের উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ। শীর্ষ এক পুলিশ কর্মকর্তার বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।

এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের মহাপরিদর্শক রাজারুদিন হোসেন বলেছেন, মালয়েশিয়ার দুটি রাজ্যের ২০টি আশ্রম থেকে সমন্বিত অভিযানে এই শিশুদের উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় ‘উস্তাজ’ বা ইসলামিক ধর্মীয় শিক্ষকসহ ১৭১ জন প্রাপ্তবয়স্ককে গ্রেফতার করেছে তারা।

রাজারুদিন জানান, চলতি মাসে অবহেলা, অপব্যবহার, যৌন হয়রানি ও উৎপীড়নের অভিযোগ দাখিল করা হয়েছিল। এর পরই এই উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। উদ্ধারকৃতদের বয়স এক থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। তবে ওই অভিযোগ কে করেছিল সে বিষয়ে কোনও তথ্য দেননি তিনি।

পুলিশের মহাপরিদর্শক আরও বলেন, আশ্রমগুলো পরিচালনা করে গ্লোবাল ইখওয়ান সার্ভিসেস অ্যান্ড বিজনেস (জিআইএসবি)।

এই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি একটি নিষিদ্ধ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে। বুধবার একটি বিবৃতিতে, জিআইএসবি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, তারা দাতব্য এই আশ্রমগুলো পরিচালনা করে না।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ‘ইসলামি ও জাতীয় আইনের পরিপন্থি এমন কোনও কাজের পরিকল্পনা করা এবং তা পরিচালনা করা আমাদের নীতিবিরোধী।’ তারা একটি পুলিশে অভিযোগ করে এ বিষয়ে তদন্তের দাবি করবে বলে জানিয়েছে।

জিআইএসবি-এর ওয়েবসাইট অনুসারে, সুপারমার্কেট থেকে লন্ড্রি পর্যন্ত ব্যবসায় জড়িত প্রতিষ্ঠানটি। ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মিসর, সৌদি আরব, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও থাইল্যান্ডসহ একাধিক দেশে তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম রয়েছে।

রাজারুদিন বলেন, পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, উদ্ধারকৃত শিশুরা মালয়েশিয়ার জিআইএসবি-এর কর্মীদের সন্তান। জন্মের কিছু দিন পরেই তাদের এসব আশ্রমে পাঠানো হয়। আশ্রমে বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয় তারা।

তিনি আর বলেন, ভুক্তভোগীরা প্রথমে প্রাপ্তবয়স্ক অভিভাবকদের কাছে যৌন নির্যাতনের শিকার হয় এবং পরে আশ্রমে অন্য শিশুদের কীভাবে যৌন নির্যাতন করতে হবে, তা তাদের শেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

১৯৯৪ সালে মালয়েশিয়া সরকার মালয়েশিয়াভিত্তিক আল-আরকাম ধর্মীয় সম্প্রদায়কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। বর্তমানে নিষ্ক্রিয় এই সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে জিআইএসবি। তবে তারা নিজেদের ইসলামিরীতি ভিত্তিক একটি শিল্পগোষ্ঠী হিসেবে দাবি করে।

এর আগে প্রতিষ্ঠানটি বিতর্কিত ‘ওবিডিয়েন্ট ওয়াইভস ক্লাব’ (অনুগত স্ত্রীদের ক্লাব) প্রতিষ্ঠা কারণে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল। এই ক্লাবের পক্ষ থেকে নারীদের ‘যৌনকর্মীর মতো’ স্বামীর কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল।

রাজারুদিন বলেন, শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও নথিভুক্ত করার জন্য পাঠানো হবে। শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধ ও মানবপাচারের আইনের  মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে।

তিনি বলেছেন, ‘জনসাধারণের সহানুভূতি অর্জন ও সংগঠনের তহবিল সংগ্রহের জন্য শিশু ও ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করা হয়েছিল। আমরা দেখেছি ক্ষতিকারক উপায়ে কীভাবে ধর্মীয় হাতিয়ার ব্যবহার করে শিশুদের প্ররোচিত করা হয়েছে।’