Engineer’s Day 2024: এম বিশ্বেশ্বরায় কে ছিলেন? কেন তাঁর জন্মদিনে পালন করা হয় ইঞ্জিনিয়ারস দিবস

১৫ সেপ্টেম্বর ভারতে ইঞ্জিনিয়ারস দিবস বা প্রকৌশলী দিবস পালিত হচ্ছে। এই দিনটি স্যার এম বিশ্বেশ্বরায়ের নামে উৎসর্গ করা হয়। আপনি কি জানেন স্যার এম বিশ্বেশ্বরায় কে ছিলেন? বিশ্বেশ্বরায় কী করেছিলেন যে প্রতি বছর সারা দেশ তাঁর স্মরণে প্রকৌশলী দিবস উদযাপন করে? তাই এই নিবন্ধটি অবশ্যই পড়ুন। কারণ একজন ভারতীয় হওয়ায়, আমাদের অবশ্যই সেই মহান ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে হবে যিনি ভারতে প্রকৌশলের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।

এম. বিশ্বেশ্বরায়ের পুরো নাম মোক্ষগুণ্ডম বিশ্বেশ্বরায়। ভারতের অন্যতম সেরা ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন তিনি। তাঁর কাজের কারণে তাঁকে ‘স্যার’ উপাধি দেওয়া হয়। বিশ্বেশ্বরায় ১৮৬১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর কর্ণাটকের কোলার জেলার মুদেনাহাল্লি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জীবন ছিল সরলতা, পরিশ্রম ও নিষ্ঠার প্রতীক।

স্যার এম. বিশ্বেশ্বরায়ার প্রাথমিক শিক্ষা তাঁর গ্রামের একটি স্কুলে হয়েছিল। পড়াশোনার প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল এবং শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী ছাত্র। উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি বেঙ্গালুরুর সেন্ট্রাল কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি তার অ্যাকাডেমিক মেধার ভিত্তিতে সরকারি বৃত্তি পান। এর পরে, তিনি পুনের বিখ্যাত কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি নেন। এটি ছিল তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট যেখান থেকে তিনি নিজেকে প্রকৌশলের ক্ষেত্রে উৎসর্গ করেছিলেন।

ভারতের জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সেচ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে স্যার এম. বিশ্বেশ্বরায়র সবচেয়ে বিশিষ্ট অবদান রয়েছে। নদীর জল সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য তিনি অনেক কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। তার দ্বারা উদ্ভাবিত ‘ব্লক সিস্টেম’ প্রযুক্তি সেচ ও জল বন্টনের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেয়।

তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত প্রকল্প ছিল কৃষ্ণ রাজা সাগর (KRS) বাঁধ, যা তিনি কর্ণাটকের মহীশূরে কাবেরী নদীর উপর তৈরি করেছিলেন। এই বাঁধটি সেই সময়ের সবচেয়ে বড় জল প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি ছিল। এটি সেচ, পানীয় জল এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যাপক সুবিধা প্রদান করেছে। এর পাশাপাশি তিনি হায়দ্রাবাদের নিষ্কাশন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ সমস্যারও সমাধান করেছেন।

স্যার বিশ্বেশ্বরায় মুম্বাই বন্দর এলাকায়ও গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি করেছিলেন। সেখানে জল নিষ্কাশন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে তার পরিকল্পনা এখনো প্রশংসিত।

স্যার এম. বিশ্বেশ্বরায় তার অসাধারণ কাজের জন্য অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৫৫ সালে, তিনি ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘ভারত রত্ন’ লাভ করেন। ১৯১১ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘নাইট কমান্ডার অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার’ (KCIE) উপাধিতে সম্মানিত করে। এরপর তার নামের সঙ্গে যোগ হয় ‘স্যার’ উপাধি।

স্যার এম. বিশ্বেশ্বরায় শুধু একজন মহান প্রকৌশলীই ছিলেন না, একজন চমৎকার পরিকল্পনাকারী, দূরদর্শী এবং জাতি নির্মাতাও ছিলেন। তাঁর জীবন আমাদের শিক্ষা দেয় যে কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং শৃঙ্খলার সাথে যে কোনও ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করা যায়। তার অর্জন আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। ভারতের ইতিহাসে তাঁর নাম চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করা আছে।