টালা থানার ওসিকে সিবিআইয়ের গ্রেফতার কি ত্রুটিপূর্ণ? কলকাতা পুলিশের অন্দরে চর্চা

আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করার ঘটনায় আজ, মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে হয়েছে শুনানি। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পার্দিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রর বেঞ্চে শুরু হয় সওয়াল–জবাব। এখানেই মুখোমুখি হয়েছেন আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং ও কপিল সিব্বল। তবে এখানে টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের গ্রেফতারের বিষয়টি সেভাবে ওঠেনি। আইনের বই অনুযায়ী টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের গ্রেফতারে ‘ত্রুটি’ আছে বলে মনে করেন কিছু কলকাতা পুলিশের আইন বিশেজ্ঞরা। তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে টালা থানার ওসিকে শনিবার সিবিআই গ্রেফতার করে। কিন্তু সেটা আইন মেনে করা হয়নি বলেই পুলিশের একাংশের দাবি বলে সূত্রের খবর।

এদিকে সিবিআই হেফাজতে থাকাকালীন জেরা ওসি অভিজিৎ মণ্ডল নিজের কাজ নিয়ে বিস্তারিত সিবিআই অফিসারদের জানিয়েছিলেন। তদন্তে তিনি কোন কাজ করে ছিলেন এবং কোথায় থেমেছিলেন তাও জানান। তাতে প্রমাণ লোপাটের কোনও তথ্য বেরিয়ে আসেনি। আরও কিছু জানতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেন গ্রেফতার করা দরকার সেটা শিয়ালদা আদালতে সিবিআই জানিয়েছিল। সেক্ষেত্রে আদালতও কোনও আপত্তি করেনি। কিন্তু লালবাজারের কয়েকজন দুঁদে পুলিশের আইন বিশেষজ্ঞ এই গ্রেফতার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমনকী বিষয়টি নিয়ে মামলা করবেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।

আরও পড়ুন:‌ ‘‌জুনিয়র ডাক্তাররা বাচ্চা ছেলেমেয়ে’‌, কলকাতার মেয়র স্মরণ করালেন তাঁদের কর্তব্য

অন্যদিকে লালবাজার সূত্রে খবর, কর্তব্যরত একজন পুলিশ অফিসারকে ভারতীয় ফৌজদারি আইনে রক্ষাকবচ দেওয়া আছে। এমনকী ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতাতেও তা বলা আছে। আর সেটি হল, সরকারি কাজে ত্রুটি–বিচ্যুতির জন্য একজন পুলিশ অফিসারকে তাঁর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া গ্রেফতার করা যায় না। তেমন পরিস্থিতি হলে একজন পুলিশ অফিসারকে নিতান্তই গ্রেফতার করতে হলে, সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আগাম অনুমতি নিতে হবে। আর অভিযুক্ত ব্যক্তি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী হলে সেক্ষেত্রে গ্রেফতারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রয়োজনীয় অনুমতি লাগবে। টালা থানার ওসির ক্ষেত্রে তেমন কিছু করা হয়নি বলে লালবাজারে আলোচনা হয়েছে।

এছাড়া কলকাতা পুলিশের আইন বিশেষজ্ঞরা দুটি আইনকে সামনে নিয়ে আসছেন। আর ওই দুটি আইনকে সামনে রেখেই মামলা করার কথা ভেবেছেন। এক, আগের ফৌজদারি আইনের ৪৫ নম্বর ধারায় এই সুরক্ষাকবচ পুলিশ অফিসারদের দেওয়া হয়েছিল। এখন ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ৪২ নম্বর ধারা অনুযায়ী এই রক্ষাকবচ পুলিশ অফিসারদের দেওয়া হয়েছে। এমনকী বামফ্রন্ট আমলে নন্দীগ্রামে গুলি চালানোর ঘটনায় অভিযুক্ত আইপিএস এবং পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের আগে সিবিআই রাজ্য সরকারের অনুমতি নিয়েছিল। তাহলে এখন কেন তা করা হল না?‌ এই প্রশ্নই তুলছে কলকাতা পুলিশের আইন বিশেষজ্ঞরা বলে সূত্রের খবর।