অবশেষে স্কুলমাঠ থেকে সরে গেলো পশুর হাট

অবশেষে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠ থেকে পশুর হাট স্থানান্তর করা হয়েছে। কয়েক দশকের ভোগান্তি শেষে স্কুলমাঠ থেকে পশুর হাট সরানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুল গেটে ব্যানার টানিয়ে ঘোষণা দিয়ে হাট স্থানান্তরের বিষয়টি স্থানীয়দের জানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে স্কুলের পাশে আলী কালী মার্কেটের পেছনের মাঠে পশুর হাট বসছে।

উলিপুরের দুর্গাপুর ইউনিয়নের পশুর হাটটি বেশ প্রসিদ্ধ। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এই হাটে পশু ক্রয়-বিক্রয় করতে ভিড় করেন। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে স্কুলমাঠে পশুর হাট বসানো হচ্ছিল। এতে করে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও স্থানীয় শিশুদের খেলাধুলা করা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছিল।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আপত্তি জানিয়ে স্কুলমাঠ থেকে পশুর হাট সরানোর দাবি তুললেও স্থানীয় প্রশাসন, ইজারাদার ও প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে তা সম্ভব হচ্ছিল না। এ নিয়ে গণমাধ্যমে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশের পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয়। তাতেও প্রধান শিক্ষক কর্ণপাত না করলে কয়েক মাস আগে প্রধান শিক্ষকের মান্থলি পে অর্ডার (এমপিও) স্থগিত করে মাউশি। এরপরই টনক নড়ে প্রধান শিক্ষক ও ইজারাদারের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহ আগে স্কুলমাঠ থেকে পার্শ্ববর্তী আলী কালী মার্কেটের পেছনের মাঠে পশুর হাট স্থানান্তর করা হয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে প্রতি মঙ্গলবার ও শুক্রবার ওই মাঠেই নিয়মিত পশুর হাট বসছে।

স্কুলের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মাউশি এমপিও স্থগিত করে দেওয়ার কারণেই প্রধান শিক্ষকের টনক নড়েছে। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীরাও বেশ খেপে গিয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে প্রধান শিক্ষকের মদতেই স্কুলমাঠে পশুর হাট আয়োজন করা হচ্ছিল। মাউশি আরও আগে কঠোর ব্যবস্থা নিলে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিন ভোগান্তি পোহাতে হতো না। এখন বেতনে টান পড়ায় প্রধান শিক্ষক বাধ্য হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত পশুর হাট সরানোয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সকলেই স্বস্তি পেয়েছেন।

সহকারী প্রধান শিক্ষক নুর ইসলাম বলেন, ‘স্কুলমাঠ থেকে পশুর হাট সরিয়ে নেওয়ায় আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই খুশি। পশুর হাটের কারণে আগে শিক্ষার্থীরা মাঠে ভালোভাবে খেলতে পারতো না। মাঠ নোংরা হওয়ার কারণে হাটের পরের দিন মাঠ দিয়ে চলাচল করাও মুশকিল ছিল। শিক্ষার্থীরা স্কুলমাঠ থেকে পশুর হাট সরানোর জন্য দাবি জানিয়েছিল। এখন হাট সরিয়ে নেওয়ায় পরিবেশ ফিরে এসেছে।’

এ ব্যাপারে জানতে প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি রায় ও হাট ইজারাদার বাবলু সরকারকে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা কেউ রিসিভ করেননি।

স্কুল মাঠে পশুর হাট বসানো ছাড়াও প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি রায়ের বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দসহ প্রতিষ্ঠানের প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা রয়েছে। মামলাটি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে। সম্প্রতি এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের জমি বেহাত করার অভিযোগও উঠেছে।