বগুড়ায় নানা নাটকীয়তার পর নিহত স্কুলছাত্র রাতুলের দাফন সম্পন্ন

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বোন ও ভগ্নিপতির সঙ্গে বগুড়া শহরে বিজয় মিছিলে অংশ নিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় স্কুলছাত্র জুনাইদ ইসলাম রাতুল (১৫)। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে জানাজা শেষে শহরের নামাজগঞ্জ আঞ্জুমান-ই-গোরস্তানে তাকে দাফন করা হয়।

তবে দাফনের আগ পর্যন্ত তাকে রাজনৈতিক ট্যাগ দিতে ব্যাপক দর-কষাকষির ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এলাকাবাসীরা জানান, জুনাইদ ইসলাম রাতুল বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জপাড়া, ঘোনপাড়ার মুদি দোকানি জিয়াউর রহমান জিয়ার ছেলে। মাদ্রাসায় লেখাপড়া না করায় তাকে নিশিন্দারা উপশহর পথ পাবলিক স্কুল ও কলেজে ভর্তি করা হয়। সে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর রাতুল বিকালে বড় বোন জেরিন ও ভগ্নিপতি আমির হামজার সঙ্গে বিজয় মিছিলে অংশ নেয়। মিছিল শহরের ঝাউতলা এলাকায় পৌঁছালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা সদর থানায় হামলা চালায়। পুলিশ গুলি চালালে রাতুলের মাথায় চারটি ছররা গুলি বিদ্ধ হয়। একটি গুলি বাঁ চোখের মধ্য দিয়ে মাথায় ঢুকে যায়।

এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ছররা গুলি লাগে। রক্তাক্ত ও অচেতন অবস্থায় রাতুলকে প্রথমে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাকে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে চিকিৎসকরা মাথার খুলির অংশ কেটে মগজ থেকে একটি গুলি বের করেন। এক্স-রে রিপোর্টে রাতুলের মাথা, চোখসহ শরীরে শতাধিক গুলির সন্ধান পান চিকিৎসকরা। এর মধ্যে ৩৬টি গুলি অপসারণ করেন তারা।

এরপর তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে কয়েক দিন আগে রাতুলকে ওয়ার্ডের বেডে দেওয়া হয়।

বাবা জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, ওয়ার্ডে দেওয়ার পর রাতুল কথা বলেছে, খাওয়া-দাওয়া করেছে। রবিবার রাত ৪টার দিকে হঠাৎ তার অবস্থার অবনতি ঘটে। ৪৯ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার সকাল ৬টার দিকে রাতুল মারা যায়।

এলাকাবাসীরা জানান, রাতুলের মৃত্যুর খবর জানাজানি হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাদের বাড়িতে ভিড় করেন। একটি রাজনৈতিক দলের কয়েকজন ওই পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা দিতে চান। বিনিময়ে জানাজার খবর মাইকে প্রচারের সময় নিজেদের ওই দলের লোক পরিচয় দিতে হবে। তাহলে রাতুলকে শহীদি মৃত্যুর স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এরপর অপর একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় রাতুলের বাড়িতে আসেন। তারাও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে রাতুলের পরিবারকে ওই দলের কর্মী-সমর্থক পরিচয় দিতে হবে। তাহলে তারা ২০২৪-এর যুদ্ধে শহীদের তালিকায় রাতুলের নাম ওঠাবে। দুটি রাজনৈতিক দল থেকে চাপ দেওয়ায় রাতুলের শোকাহত পরিবার বিড়ম্বনার শিকার হন।

এলাকাবাসীরা আরও জানান, শেষ পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক দল রাতুলের পরিবারকে তাদের করতে পেরেছে। ইতোমধ্যে রাতুল ওই রাজনৈতিক দলের হতাহতের তালিকাভুক্ত হয়েছেন।

এদিকে সোমবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে রাতুলের মরদেহ বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জপাড়া ঘোনপাড়ার বাড়িতে পৌঁছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সরকারি মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিএনপি, অঙ্গ সহযোগী সংগঠন, জামায়াত-শিবির, ঢাকা ও স্থানীয় কয়েকজন সমন্বয়ক, এলাকাবাসী ও আত্মীয়স্বজনরা অংশ নেন।

এর আগে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, জেলা জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, শহর জামায়াতের আমির আবিদুর রহমান সোহেল, পৌর কাউন্সিলর মেহেদী হাসান হিমু, নিহত রাতুলের ভগ্নিপতি আমির হামজা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধি ফয়সাল আহমেদ, ইমাম হোসাইন ইমন, স্থানীয় সমন্বয়ক ডা. তারেক কামাল প্রমুখ।

বক্তারা নিহত রাতুলের পরিবারকে সব সময় সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।