সাতক্ষীরায় মৎস্য-কৃষিতে ক্ষতি ৭০০ কোটি

টানা বৃষ্টি ও বেতনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে সাতক্ষীরায় মৎস্য ও কৃষি খাতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে রোপা আমন, আউশ ও বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির ক্ষেত। সেই সঙ্গে ভেসে গেছে ছয় হাজার মৎস্যঘের ও দেড় হাজার পুকুর।

জানা গেছে, গত সপ্তাহে চার দিন টানা ভারী বর্ষণে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকার শ্মশানঘাটের পাশে বেতনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে দুই উপজেলার ৩ ইউনিয়নের কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। ভেসে যায় এসব গ্রামের ফসলি জমি, পুকুর ও ঘের। ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বেতনা নদীর ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কার করতে পারেনি। ফলে লোকালয় পানি ঢোকা এখনও অব্যাহত আছে।

বাঁধ ভেঙে প্লাবিত বিনেরপোতা, খেজুরডাঙ্গা, গোপীনাথপুর, তালতলা, আহসাননগর, হরিণখোলা, গোয়ালপোতা, গাছা, দক্ষিণ নগরঘাটা, হাজরাতলা, পালপাড়া, গাবতলা, দোলুয়া, নগরঘাটা, রথখোলা, কাপাসডাঙ্গা, নিমতলাসহ ৫০টি গ্রামের মানুষ এখনও পানিবন্দি। বাড়িঘরে পানি ওঠায় অনেকেই ছেড়েছেন এলাকা। এ ছাড়া বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘুটেরডাঙ্গী, রামচন্দ্রপুর, লবণগোলা, পাথরঘাটা, দামারপোতা, জিয়ালা, ধুলিহর, বালুইগাছ, ফিংড়ি, ফয়জুল্লাহপুর, দরবেশতিয়া, কোমরপুর, তেঁতুলডাঙ্গী, মাছখোলা, শ্যালেসহ ৩০টি গ্রাম ও পৌর এলাকার অর্ধেক এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ২০-২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে এসব এলাকার পুকুর, ঘের, আমন ধান ও শাকসবজির ক্ষেত।

সদর উপজেলার তালতলা গ্রামের ঘের ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান জানান, তার ১২০ বিঘা জমির তিনটি ঘের রয়েছে। সব কটায় চাষ করা হয়েছিল সাদামাছ। বৃষ্টিতে সবগুলো ঘের তলিয়ে রয়েছে। সব মিলিয়ে তার প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

আগরদাড়ি ইউনিয়নের কৃষক মো. আজহারুল ইসলাম জানান, তিনি ৮ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছেন, এর মধ্যে ৬ বিঘা পানিতে তলিয়ে গেছে। ৮ বিঘা জমিতে তার লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। বৃষ্টির পানি বেড়ে পুরো ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ধান গাছগুলো পানির নিচে পচে গেছে। এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে গাছগুলো সব মারা যাবে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি আমন মৌসুমে অতি বৃষ্টিতে পাঁচ হাজার ৪৫২ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৯ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর বাজারমূল্য ৯ কোটির বেশি। এখনই জলাবদ্ধতা নিরসন করতে না পারলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়বে।’

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিসার মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘অতি বৃষ্টিজনিত কারণে জেলার সাতটি উপজেলায় বিশেষ করে শ্যামনগর ও সাতক্ষীরা সদরে বেতনা নদীর একটা অংশ ভেঙে যাওয়ার কারণে তার আশপাশের ঘেরগুলো একেবারে পানির সঙ্গে মিশে গেছে। এখানে মোট ৫ হাজার ২৩০ হেক্টর এরিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মৎস্যচাষিদের প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অবকাঠামোগত যে ক্ষতি হয়েছে, সেটিও চার কোটি টাকার অধিক।’