দিনে-দুপুরে ব্যবসায়ীর ৭০ লাখ টাকা ডাকাতি, গ্রেফতার ৩

ছুটির দিনে ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে রাজধানীতে দিনে-দুপুরে ডাকাতি করে আসছিল একটি চক্র। নগদ টাকাসহ কোনও ব্যবসায়ী এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার পথে ধাক্কা দিয়ে দ্বন্দ্বে জড়াতো চক্রটি। এ সময় আশেপাশে ওত পেতে থাকা চক্রের আরও সদস্য ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ তুলে মারধর করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিতো।

বুধবার (২৮ মে) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে (ডিবি) লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান এ তথ্য জানান। সম্প্রতি চট্টগ্রাম ও খুলনায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো– খোকন দাস ওরফে বাইল্যা খোকন, রেজাউল করিম ও কামাল হোসেন। তাদের কাছ থেকে নগদ ৯ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

মশিউর রহমান বলেন, ‘গত ২৬ এপ্রিল মা বুলিয়ান অ্যান্ড সিলভার জুয়েলার্সের কর্মচারী মহিউদ্দিন পুরান ঢাকার কদমতলী খেজুরের গলি থেকে ৭০ লাখ টাকাসহ তাঁতি বাজারের উদ্দেশে পায়ে হেঁটে রওনা দেন। ইসলামপুরের নবনারায়ণ লেনের প্রবেশ মুখে পৌঁছালে একজন তাকে ধাক্কা দিয়ে উল্টো অভিযোগ করে ধাক্কা দিলে কেন? এ সময় মহিউদ্দিন ক্ষমা চেয়ে চলে যেতে চাইলে আশেপাশে ওত পেতে থাকা আরও সাত থেকে আট জন ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ তুলে তাকে কিল, ঘুষি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে তার চোখে আঙুল দিয়ে গুল লাগিয়ে দেয় এবং টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।’

ডিবি লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার বলেন, ‘এ ঘটনায় ২৭ এপ্রিল জুয়েলার্সের মালিক আকিদুল ইসলামের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে থানায় একটি ডাকাতি মামলা হয়। মামলার সূত্র ধরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ছায়া তদন্ত শুরু করে। এক পর্যায়ে থানা-পুলিশ ও ডিবি পুলিশের তদন্তে ওই তিন জন শনাক্ত হয়।’

তিনি বলেন, ‘পুরাতন ঢাকার ওই এলাকাগুলোতে প্রতিদিন শত কোটি টাকার বৈধ লেনদেনের পাশাপাশি অনেকেই হুন্ডির টাকা লেনদেন করেন। ডাকাত চক্র ওত পেতে থাকে এই হুন্ডি ব্যবসায়ীদের টাকা ডাকাতি করার জন্য। হুন্ডিতে টাকা লেনদেন করা আইন স্বীকৃত না। সে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা অধিকাংশ সময় বিষয়টি পুলিশ বা আদালতকে জানায় না।’

মশিউর রহমান বলেন, ‘বাইল্যা খোকন এই চক্রের মূল হোতা। সে পুরাতন ঢাকায় বসবাস করে। রেজাউল করিম এক সময় পুরাতন ঢাকাতেই ব্যবসা করতো। খুলনা, বরিশাল, চাঁদপুর, ও ময়মনসিংহ থেকে সমমনাদের ঢাকায় এনে টার্গেট করা ব্যক্তিকে নিরস্ত্র কায়দায় কিল-ঘুষিতে রক্তাক্ত করে চোখে গুল লাগিয়ে ডাকাতি করতো তারা। গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ডাকাতি এবং ছিনতাই বিষয়ক একাধিক মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে। এর আগে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ বাবু এবং শাহ আলম নামে ওই চক্রের দুই জনকে গ্রেফতার করে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে যারা ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরি করে তারা একাধিকবার করে, যারা মাদক ব্যবসা করে তারাও একাধিকবার করে। তারা হাজতবাস করে একটা সময় বের হয়ে আসে, কিন্তু সংশোধন হয় না। তাদের পুর্নবাসন হয় না অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে। এ সব কারণে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা কিংবা মনজগতের কোনও পরিবর্তনও হয় না।’