উত্তরবঙ্গে গড় রক্ষা করতে পেরেছে বিজেপি। কিন্তু উল্লাস করার মতো কিছু আর নেই। যে দার্জিলিং লোকসভা নিয়ে এতদিন গর্ব করত বিজেপি সেখানেও ধস নেমেছে। বিজেপির ভোট কমেছে দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে।
কিন্তু কেন এমন হল?
বিজেপি নেতা অরুণ মণ্ডল হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে বলেন, শিলিগুড়ি শহরে তৃণমূল বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবে দার্জিলিং লোকসভা আসনে আমাদের কোথায় ঘাটতি ছিল সেটা দেখা হবে। অন্তর্ঘাতের কোনও ব্যাপার আমার এখনও পাইনি।
এনিয়ে ইতিমধ্যেই বিজেপি নেতৃত্ব কাটাছেঁড়া করা শুরু করেছেন।
কী উঠে আসছে তাতে?
বিজেপির এক শীর্ষ জেলা নেতৃত্বের কথায়, সরাসরি কোথাও কোনও অন্তর্ঘাত হয়েছে কি না সেটা আমরা খুঁজে দেখব। তবে যে বিধায়ক নির্দল হিসাবে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি তো নোটার থেকেও কম ভোট পেয়েছেন। তবে রাজু বিস্তাকে প্রার্থী না করে অন্য কাউকে করলে পরিস্থিতি হয়তো আরও অন্যরকম হয়ে যেত।
আসলে এবার প্রথম থেকেই দার্জিিলং লোকসভা কেন্দ্রে কাকে প্রার্থী করা হবে তানিয়ে দলের অন্দরে নানা টানাপোড়েন চলছিল। প্রাক্তন আমলা হর্ষবর্ধন শ্রীংলা আচমকাই ময়দানে নেমে পড়েছিলেন। তিনি টিকিট পেতে পারেন বলে কানাঘুষো শুরু হয়ে গিয়েছিল। এমনকী শিলিগুড়িতে তিনি জনসংযোগও শুরু করে দিয়েছিলেন। তবে সেই সময় শিলিগুড়িতে বিজেপির একাধিক নেতৃত্ব হর্ষবর্ধনকে মানতে চাননি। পরে অবশ্য রাজু বিস্তা টিকিট পান। কিন্তু ভোট গণনা হতে দেখা গেল জিতেছেন রাজু বিস্ত। কিন্তু আশানুরূপ রেজাল্ট হয়নি।
বরাবরের মতোই এবারও পাহাড় ছিল বিজেপির দিকেই। তবে পাহাড়ে বরাবরই নানা ধরনের আঞ্চলিক সমীকরণ কাজ করে। এবারও সেটা হয়েছিল। মোর্চা নেতা বিমল গুরুংও নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার জন্য রাজুর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। পরাজিত হয়েছেন তুলনায় কম পরিচিত তৃণমূলের গোপাল লামা। পাহাড়ের ভোট ও শহর শিলিগুড়ির ভোট এবারও বড় ফ্যাক্টর বিজেপির জয়ের পেছনে। শিলিগুড়ি শহরের একের পর এক ওয়ার্ডে পিছিয়ে যায় তৃণমূল। এর জেরে সুবিধা হয় বিজেপির। কিন্তু তারপরেও কেন বিগত দিনের তুলনায় জয়ের ব্যবধান কমে গেল?
২০১৯ সালে এই আসনে তৃণমূলের অমর সিং রাইকে ৪,১৩,৪৪৩ ভোটে পরাজিত করেছিলেন রাজু বিস্তা। বিজেপির ভোট শেয়ার ছিল ৫৯.০৮ শতাংশ। এবার দার্জিলিং লোকসভা আসনে রাজু বিস্ত ১৭৮৫২৫ ভোটে জয়ী হয়েছেন। কংগ্রেসের মুনিশ তামাং মাত্র ৮৩, ৩৭৪ ভোট পেয়েছেন। নোটাতেই ভোট পড়েছে ১৮,০২১টি।
সূত্রের খবর, এবার ভূমিপূত্রকে প্রার্থী করার দাবিতে প্রথম থেকে সরব হয়েছিলেন পাহাড়ের বিজেপি নেতৃত্ব। কার্শিয়াংয়ের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা এবার নির্দল হিসাবে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। তবে তিনি ভোট পেয়েছেন মাত্র ০.৬ শতাংশ। মাত্র ৭৪৭৭টি ভোট। রাজু বিস্তা পেয়েছেন ৫১.২ শতাংশ ভোট। তৃণমূলের গোপাল লামা পেয়েছেন ৩৭.৭ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৬.৩ শতাংশ ভোট।
২০১৯ সালে বিজেপি পেয়েছিল ৫৯.১৯ শতাংশ ভোট। তৃণমূল পেয়েছিল ২৬.৫৬ শতাংশ আর কংগ্রেস পেয়েছিল ৯.১৩ শতাংশ ভোট।