বৃদ্ধার সঙ্গে গল্প করল ডাকাতরা, তারপর চলল অবাধে ডাকাতি, ব্যান্ডেল জুড়ে আলোড়ন

ডাকাতি করতে এসে বৃদ্ধার সঙ্গে গল্প করে গেল ডাকাতরা। তা বলে ডাকাতি করতেও তারা পিছপা হয়নি। এই অপরাধের ফাঁকে বৃদ্ধার একাকীত্ব কাটিয়েছে এই ডাকাত দল। যা শুনে চক্ষু চড়কগাছ হয়েছে পুলিশের। কারণ অবাধে ডাকাতি, লুটপাট করে চারজন ডাকাত বলে অভিযোগ বৃদ্ধার। কিন্তু তার সঙ্গে ওই বৃদ্ধার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ গল্পও করে ডাকাতরা। ব্যান্ডেল নলডাঙায় এই ঘটনা ঘটেছে। নলডাঙার বাসিন্দা বৃদ্ধা রেনু পাল (৬৮) একাই থাকেন বাড়িতে। তার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে অদিতি বন্দ্যোপাধ্যায় থাকেন ব্যান্ডেল ওলাইচণ্ডীতলায়। ছোট মেয়ে সোনালী থাকেন মুম্বইতে। দু’‌মাস ছোট মেয়ের বাড়িতে থেকে ফিরেছেন বৃদ্ধা। আর আজ, শুক্রবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাথরুম যান তিনি। সেখান থেকে বেরিয়ে দেখেন ঘরে বসে আছে চার যুবক। যারা নিজেদের ডাকাত বলেই পরিচয় দেয়।

এই শুনে বৃদ্ধার হাত–পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। তখন বৃদ্ধা রেনু পাল চিৎকার করতে গেলে তাঁর মুখ চেপে ধরে ডাকাতরা। আর বৃদ্ধাকে ডাকাতরা বলতে থাকে, চিৎকার করলে প্রাণে মেরে ফেলবে। তারপর হাত–পা বেঁধে রেখে বৃদ্ধার শরীর থেকে সোনার গয়না খুলে নেয়। আলমারির চাবি নিয়ে সেখান থেকে পেনশনের ৩৫ হাজার টাকা তুলে পকেটে ভরে ফেলে। আর একটা শাড়িও সেখান থেকে নিয়ে যায়। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে এই ডাকাতি চলে। কিন্তু ওই ডাকাতরা বৃদ্ধার উপর কোনও অত্যাচার করেনি। খারাপ ব্যবহার করেনি। বরং ডাকাতি শেষে গল্প করে তারা। একাকীত্ব কাটিয়ে এটাই তাদের পেশা জানিয়ে পরে চম্পট দেয়।

আরও পড়ুন:‌ স্কুল খুলতে হবে, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সরাতে কেন্দ্র–রাজ্যকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট

পুলিশের কাছে বৃদ্ধা রেনু পাল বলেন, ‘‌ডাকাতদের বয়স ২২–২৪ বছর হবে। এখানে এসে একজন ঘুমিয়ে পড়েছিল। আর বাকিরা আমাকে বেঁধে রেখে ডাকাতি করে। আর এই কাজ করার ফাঁকে বৃদ্ধার স্বামী সম্পর্কে জানতে চায় তারা। কবে মারা গিয়েছে, কি কাজ করত, মেয়েরা কোথায় থাকে, সংসার কেমন করে চলে এই সব নিয়ে গল্প করে ডাকাতরা।’‌ বৃদ্ধার পাশেই থাকেন জা মিতা পাল। তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‌আমরা পাশে থাকলেও এই ডাকাতির ঘটনা নিয়ে কিছুই টের পাইনি।’‌ এই আত্মীয় ও প্রতিবেশি থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে তদন্ত শুরু করেছে। এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী।

গোটা ঘটনার কথা শুনে স্থানীয় বাসিন্দা তরুণ চট্টোপাধ্যায় সরাসরি পুলিশে খবর দেন। ব্যান্ডেল পুলিশ ফাঁড়ি থেকে পুলিশ অফিসাররা এসে গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। কোদালিয়া–২ গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য শুভঙ্কর রাহার কথায়, ‘‌বড় রাস্তাগুলিতে পুলিশ টহল দেয়। কিন্তু ভিতরের রাস্তাগুলিতে পুলিশ সচরাচর যায় না। আগে পুরনো কোদালিয়ায় এই ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল। তবে নলডাঙ্গায় এমন ঘটনা এই প্রথম। ডাকাতদের ধরুক পুলিশ এবং টহল বাড়ানো হোক।’‌ তবে ডাকাতি করতে এসে গল্প করে যাওয়ার ঘটনা সত্যিই বিরল।