ঢাকায় ডাকাতির পর গ্রামে কোরবানি দেন তারা!

কোরবানির গরু বিক্রির জন্য ঢাকায় আসেন জামালপুরের একদল বেপারী। গরু বিক্রি শেষে টাকা নিয়ে ঢাকার বিমানবন্দর সড়ক থেকে জামালপুরের উদ্দেশ্যে একটি বাসে উঠেন তারা। পথে বাসটির চালক ও তার সহকারী (হেলপার) এবং যাত্রীবেশে থাকা ডাকাত দলের সদস্যরা তাদের জিম্মী করে গরু বিক্রির সব টাকা কেড়ে নেয়। পরে ওই টাকায় ডাকাত দলের সদস্যরা নিজ এলাকায় গিয়ে গরু কিনে কোরবানিও দেন। এই ডাকাত দলটি ঈদের আগ পর্যন্ত ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় ৭টি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে।

আজ রবিবার (২৩ জুন) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ডিবি কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান।

রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন সড়কে ডাকাতি করা ওই চক্রটির ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরা বিভাগ। গ্রেপ্তাররা হলেন—মো. ফয়সাল আহাম্মেদ রিগান (৩০), মো.তারেক মিয়া (৩৫), তানভীর আহম্মেদ অন্তর (২৬), মো. মিলন (২২), মো. জাবেদ ইকবাল ওরফে বাদল (৩২), আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), মো. রতন মিয়া (৩৮), মো. সেলিম মিয়া (৩০), মো.রুবেল মিয়া (৩৪) ও মো. সুমন মিয়া (৩৫)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে লুটের ৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা, ১৩টি মোবাইল ফোন, ২টি চাকু ও প্লাস্টিকের রশি উদ্ধার করা হয়।

গতকাল শনিবার (২২ জুন) রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার নাবিস্কো এলাকায় এবং ময়মনসিংহের কোতয়ালী থানার চরপাড়া মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ডিএমপির ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গত ১৬ জুন রাজধানীতে গরু বিক্রি করে পাইকারদের একটি দল বিমানবন্দর এলাকা থেকে একটি বাসে উঠে জামালপুর যাওয়ার জন্য। তারা বাসে উঠার পর দরজা লক করে দেয় হেলপার। আব্দুল্লাহপুরের আগে পাইকারদের কাছে ভাড়া চায় হেলপার। পাইকাররা পরে ভাড়া দিতে চান। তখন পাইকারদের কিল ঘুষি মেরে তাদের মুখ বেঁধে ফেলে হেলপারসহ বাসে আগে থেকে থাকা যাত্রীবেশী ডাকাত দলের সদস্যরা। পাইকারদের বিভিন্ন হুমকি দিতে থাকে ডাকাত দলের সদস্যরা। পরে গরু বিক্রির পুরো টাকা কেড়ে নিয়ে পাইকারদের রাস্তায় ফেলে দেয় ডাকাত দলের সদস্যরা। 

এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা হয়। এরপর তদন্ত শুরু করে ডিবির উত্তরা বিভাগ।  তদন্তের এক পর্যায়ে ডিবি উত্তরা বিভাগ এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ১০ ডাকাতের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও গাজীপুর এলাকায় একাধিক মামলা রয়েছে। এই ডাকাত দলের কাজই হচ্ছে বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে ডাকাতি করা। এছাড়া তারা বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থান করে প্রবাসীরা আসলে তাদের গাড়ির গতিরোধ করে সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যেতো।

গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা প্রায়ই ঢাকা ও গাজীপুরের সড়কে ডাকাতি করে থাকে। এই ডাকাত দলের নেতৃত্বে রয়েছে গ্রেপ্তার বাদল, তারেক ও লিটন নামে আরেক পলাতক ডাকাত। ঈদুল আজাহাকে কেন্দ্র করে অস্থায়ী গরুর হাটগুলোতে তাদের লোকজন থাকে। তারা গরুর পাইকারদের অনুসরণ করে তাদের গাড়িতে তুলে ডাকাতি করে। এই চক্রটি এখন পর্যন্ত ২০০ থেকে ২৫০টি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। এবারের ঈদুল আজাহাকে কেন্দ্র করে তারা ছয় থেকে সাতটি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। ঈদের আগে খিলক্ষেত এলাকায় চারজনকে গাড়িতে তুলে চক্রটি পাঁচ লাখ টাকা ও দুটি মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে যায়। ঈদের ১০ দিন আগে বিমানবন্দর থেকে একজন প্রবাসীকে গাড়িতে তুলে তার রিয়াল ও টাকা লুট করে নিয়ে যায়।

হারুন অর রশীদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতরা জানায় লুট করার টাকার মধ্য থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে ডাকাত দলের অন্যতম সদস্য মো. জাবেদ ইকবাল ওরফে বাদল এবার ঈদে গরু কোরবানি দিয়েছে। লুটের টাকার মধ্যে থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে ডাকাত দলের আরেক নেতা মো. তারেক মিয়া একটি গরু কোরবানি দিয়েছে।



রার/সা.এ