এইচএসসির সব পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর

কোটা আন্দোলন ঘিরে তৈরি অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে সব এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গ্রেফতার সব পরীক্ষার্থীকে মুক্ত করে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এমনকি পরীক্ষার্থী গ্রেফতারের আরও তথ্য থাকলে তাও জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় পরীক্ষার্থীদের পক্ষে আইনজীবীও নিয়োগ করেছে। ইতোমধ্যে চারজন পরীক্ষার্থীর জামিন হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের সব পরীক্ষার্থীকে নতুন সূচি অনুযায়ী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল।

জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পরীক্ষার্থীদের আইনি সহায়তা দিচ্ছি। ইতোমধ্যে চার জনের জামিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামীকাল রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের পরীক্ষার্থীর জামিনের ব্যবস্থাও করা হবে। যে চার জনের জামিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে তারা রবিবার মুক্তি পাবে। আরও যারা রয়েছে, তাদের জামিনের জন্য মন্ত্রণালয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাই কোনও ধরনেরর অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে পরীক্ষার্থীদের নতুন সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। সব সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াবে। কোনও পরীক্ষার্থী গ্রেফতার হয়েছে কারও কাছে যদি এমন তথ্য থাকে তাহলে দ্রুত জানানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। আমরা চাইবো— পরীক্ষার্থীরা কোনও অপ্রচারে বিভ্রান্ত না হোক। সব পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিক।’

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক সবাইকে বলছি—আমরা যে নতুন রুটিন প্রকাশ করেছি সে অনুযায়ী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আইনমন্ত্রী পরীক্ষার্থীদের জামিনের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। আমরা সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছি, সবাই নতুন সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষায় অংশ নেবে— এটি আমাদের প্রত্যাশা।’

মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ও বিএফ শাহীন কলেজের পরীক্ষার্থীদের আগামী রবিবার জামিনের ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাতে বিভিন্ন কলেজের ব্যানারে পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ার বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের বিবৃতি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। তবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীদের নাম ও যোগাযোগের কোনও তথ্য নেই এসব বিবৃতিতে। কোন কলেজের কত পরীক্ষার্থী গ্রেফতার হয়েছে সে তথ্যও দেওয়া হয়নি। একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কতজন গ্রেফতার  হয়েছে।

ঢাকা কমার্স কলেজের বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা ঢাকা কমার্স কলেজের ২০২৪ ব্যাচের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা এই মর্মে বিবৃতি দিচ্ছি যে, যতদিন অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা সকল এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তি না দেওয়া হবে ততদিন পর্যন্ত আমরা ঢাকা কমার্স কলেজের কোনও পরীক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবো না।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা কমার্স কলেজের আট জন পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, বিএএফ শাহীন কলেজ, ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজ, নটরডেম কলেজ, হলিক্রস কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নামে এ রকম বিবৃতি সংক্রান্ত কার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিবৃতিগুলোর সবগুলোতেই একই রকম দাবি জানানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, পরীক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে পরীক্ষায় অংশ নেবে না তারা।

গ্রেফতার হওয়া পরীক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, কোনও এইচএসসি পরীক্ষার্থীর আটকের তথ্য থাকলে [email protected] ইমেইল ঠিকানায় তথ্য পাঠানোর অনুরোধ করা হলো।

মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ও বিএএফ শাহীন কলেজের পরীক্ষার্থীদের আগামী রবিবার জামিনের ব্যবস্থা করা হবে। যাদের জামিন হয়েছিল তাদের দুজন ইতোমধ্যেই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে। বাকিরা রবিবারের মধ্যে মুক্তি পাবে।