‘বন্যার্তদের খাদ্য দেওয়া হলেও গরু-ছাগলের জন্য কেউ কিছু দেয়নি’

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় গবাদি পশু গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। বন্যায় চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। খাদ্যের অভাবে অনেক গবাদি পশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় অনেকে কম দামে পালন করা এসব পশু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারিভাবে পশুখাদ্য সহায়তার দাবি জানিয়েছেন। 

এদিকে টানা ভারী বৃষ্টি ও উপকূলীয় অঞ্চল মেঘনার জোয়ারের পানিতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ। লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন পৌরসভার কাঞ্চনপুর, দেনায়েতপুর ও দেবিপুর গ্রামসহ বামনী, চরপাতা, দক্ষিণ চরআবাবিল, কেরোয়া, সোনাপুরসহ পাঁচটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও পানিতে তলিয়ে আছে। অনেক বাড়িঘর পানির নিচে চলে যাওয়ায় মানুষ গবাদি পশু নিয়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। অনেক আশ্রয়কেন্দ্রের মাঠে গবাদি পশু বেঁধে রাখা হয়েছে। কোথাও কোথাও উঁচু সড়কের ওপর বেঁধে রাখা হয়েছে। দানাদার খাবার খাওয়াতে না পেরে অনেকে  কচুরিপানা খাওয়াচ্ছেন। পশুর পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করতে না পেরে অনেকে অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। রায়পুরে অসুস্থ হয়ে মারা গেছে চার গরু ও দুই ছাগল।

পৌরসভার কাঞ্চনপুর গ্রামের খামারি নুরনবির (৪৮) পরিবারে পাঁচ সদস্য। ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে এক সপ্তাহ আগে। পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। কিন্তু বাড়ির তিনটি গরু নিয়ে চিন্তায় পড়েন। একদিন গোয়ালে গরুগুলো হাঁটুপানির মধ্যে ছিল। পরে গ্রামের আরেক ব্যক্তির বাড়ির উঠানে বেঁধে রেখেছেন। এখন খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘মানুষের দিনকালই বড় দুর্ভোগে যাচ্ছে। থাকা-খাওয়ার কোনও উপায় নেই।’ এ অবস্থায় ঘরের গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে চরম বিপাকে তার মতো অনেকেই।

পৌরসভার দেনায়েতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা হারুনুর রশীদ বলেন, ‘বসতঘরের অবস্থা খারাপ। সব ডুবে গেছে। মানুষ গরু-বাছুর নিয়ে সাঁতরে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। গরুগুলোকে ঘাস খাওয়াতে পারছেন না। গরুর জন্য ঘাস না পাওয়ায় বড় সমস্যায় পড়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের খাদ্য দেওয়া হয়েছে। তবে গরু-ছাগলগুলোর জন্য কেউই কিছু দেয়নি।’

রায়পুর ইউপির পুর্বলাচ গ্রামের খামারি জাকির হোসেন জানান, উপজেলার সব খামারে পানি ঢুকে খাদ্যের সংকটে বহু গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তার এলাকায় দুটি গরু ও একটি ছাগল মারা গেছে। এ ছাড়াও কেরোয়া ইউনিয়নে একটি গরু ও দুটি ছাগল মারা যায়। 

তিনি আরও জানান, তার মতো অনেকেই গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। নিজেরা কোথায় থাকবেন? কী খাবেন? এর সঙ্গে আছে গবাদিপশু রক্ষার চিন্তা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. আতাউর রহমান জানান, রায়পুরে বন্যা পরিস্থিতিতে মানুষ এমনিতেই বড় সমস্যায় আছেন। এ অবস্থায় যাদের ঘরে গবাদিপশু আছে, তারা স্বাভাবিকভাবে একটু বেশি সংকটে পড়েছেন। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ক্ষয়ক্ষতির খোঁজ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। গবাদি পশুর জন্য চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।