টেঁটাযুদ্ধ বন্ধে নরসিংদীতে মানববন্ধন, ৬ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি

নরসিংদীর রায়পুরার চরাঞ্চলে টেঁটাযুদ্ধ বন্ধ, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য অপরাধ দমন ও তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। শনিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার চরাঞ্চল সায়দাবাদ গ্রামে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, নারী-পুরুষসহ কমপক্ষে ৩০০ গ্রামবাসী মানববন্ধনে অংশ নেন।

এর আগে, গত ২২ আগস্ট রায়পুরার চরাঞ্চল শ্রীনগর ইউনিয়নের সায়দাবাদ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়। এরপর থেকেই সরব হয় চরাঞ্চলের সচেতন সমাজ।

মানববন্ধনে এলাকাবাসী বলেন, ‘আগে এসব অঞ্চলে টেঁটার বিস্তর ব্যবহার থাকলেও সময়ের পরিক্রমায় বেড়েছে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার। ফলে ক্রমেই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।’ আধুনিক এসব আগ্নেয়াস্ত্রের উৎস খুঁজে বের করার পাশাপাশি চরাঞ্চলের হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত সকলের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন এলাকাবাসী।

সাবমিয়া নামে এক মানববন্ধনকারী বলেন, ‘চলতি মাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যে সংঘর্ষ হয়েছে, সেখানে ছয় জন নিহত হয়েছেন। সকলের শরীরেই ছিল গুলির আঘাত। নরসিংদী জেলা কারাগারসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে লুট হওয়া সরকারি অস্ত্র চরাঞ্চলে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এসব অস্ত্র দ্রুত উদ্ধারের দাবি জানাই।’

কনকতারা বেগম নামে পঞ্চাশোর্ধ এক নারী বলেন, ‘সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সংঘর্ষে আমার ছেলে আনিস মিয়া নিহত হয়েছে। চরাঞ্চলে আর কোনও প্রকার সংঘর্ষ চাই না আমরা। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কয়েক যুগ ধরে চলতে থাকা সংঘর্ষের সমাধান চাই। সেই সঙ্গে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত যারা রয়েছে, সকলের সর্বোচ্চ বিচার চাই।’

খোদেজা বেগম নামে আরেক নারী বলেন, ‘চলতি মাসে ৬ জন নিহতের মধ্যে আমার মেয়ে ফিরোজা বেগম নিহত হয়েছে। সে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। চরাঞ্চলে এরকম ঘটনা নতুন নয়। আমরা আর কোনও প্রকার সংঘর্ষ চাই না। এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার চাই।’

কলেজশিক্ষার্থী আবদুল কাদির মোল্লা রকিব হাসান বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তার ঘিরে চরাঞ্চলের এই সংঘর্ষ নিয়ে আমরা বিব্রত। আমরা এসবের সমাধান চাই। নতুন প্রজন্মের আমরা আর কোনও প্রকার সংঘর্ষ চাই না। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বারবারই এই ধরনের সংঘর্ষ হচ্ছে রায়পুরার চরাঞ্চলে। এসব থেকে আমরা মুক্তি চাই।’

প্রসঙ্গত, রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগরের সায়দাবাদ বাজার দখলকে কেন্দ্র করে গত ২ মাস ধরে একই এলাকার হানিফ মাস্টার গ্রুপ এবং সাবমিয়া গ্রুপের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। গত ৬ আগস্ট থেকে সেটি তীব্র আকার ধারণ করে। সেই দ্বন্দ্বের জেরে গত বুধবার (২১ আগস্ট) সকাল থেকে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। বুধবার দিবাগত রাতে সেটি টেঁটাযুদ্ধে রূপ নেয়। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) হানিফ মাস্টার গ্রুপের সন্ত্রাসীদের গুলির আঘাতে মোট ৬ জন নিহত হয়।

এই ঘটনায় ২৫ আগস্ট দুপুরে সায়দাবাদ গ্রামের এরশাদ মিয়া ও মো. ইকবাল বাদী হয়ে রায়পুরা থানায় দুটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরশাদ মিয়ার করা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে হানিফ মিয়া ওরফে হানিফ মাস্টারকে। এ ছাড়া ১৩২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৩০-৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে, ইকবালের করা মামলায়ও হানিফ মিয়া ওরফে হানিফ মাস্টারকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়।

মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনও আসামি গ্রেফতার হয়নি বলে জানিয়েছেন মামলার দুই বাদী এরশাদ মিয়া ও মোহাম্মদ ইকবাল।

এ বিষয়ে রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাফায়েত হোসেন পলাশ বলেন, ‘এখনও কেউ গ্রেফতার না হলেও পুলিশ তাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’