Yudhajit Guha of Bengal got selected in India U 19 team for ODI series against Australia fan of Dale Steyn ABP Ananda exclusive

কলকাতা: অশোক ডিন্ডা-মহম্মদ শামিদের দিয়ে যে সোনার দৌড় শুরু হয়েছিল, আকাশ দীপ-মুকেশ কুমাররা যে সাফল্যের নিশান বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সেই ব্যাটনই এবার উঠল যুধাজিৎ গুহর (Yudhajit Guha) হাতে।

ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ (India U 19 Cricket Team) দলে সুযোগ পেলেন বাংলার যুধাজিৎ। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজের জন্য ভারতীয় দলে ডাক পেলেন কলকাতার চেতলার বাসিন্দা ডানহাতি পেসার। সেপ্টেম্বরে পুদুচেরিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিনটি ওয়ান ডে ম্যাচ খেলবে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দল। সেখানে বল হাতে টিম ইন্ডিয়ার ভরসা হয়ে উঠতে পারেন যুধাজিৎ।

ছোট থেকেই খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহ। শুরুটা হয়েছিল জিমন্যাস্টিক্স দিয়ে। বয়স তখন মাত্র সাড়ে তিন। সল্ট লেকে স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (SAI) ক্যাম্পাসে জিমন্যাস্টিক্স শিখতে যেতেন বাবার হাত ধরে। সেখান থেকে বাইশ গজের জগতে। হবে নাই বা কেন? বাবা কৌশিক গুহ যে ক্রিকেট অন্ত প্রাণ। বাবার কাছেই ক্রিকেটের হাতেখড়ি। এবিপি আনন্দকে যুধাজিৎ বলছিলেন, ‘বাবা আমাকে ক্রিকেটার হিসাবে দেখতে চাইতেন। বাবার সামনেই মাঠে বল করতাম। তখন থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা তৈরি হয়।’

গড়িয়া সবুজ দলে প্র্যাক্টিস করতেন। যুধাজিৎ বলছেন, ‘অনূর্ধ্ব ১৩-অনূর্ধ্ব ১৪ বিভাগ থেকে সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন নৈহাটিতে দেবেশ চক্রবর্তীর কাছে প্র্যাক্টিস করতে যেতাম। সল্ট লেকে সতীন্দর সিংহের কাছেও প্র্যাক্টিস করেছি। পরে হাওড়ায় সঞ্জীব সান্যালের কাছে প্র্যাক্টিস করি।’

২০১৭-১৮ মরশুমে ক্যালকাটা পুলিশের হয়ে ক্লাব ক্রিকেটে অভিষেক। ক্যালকাটা পুলিশ তখন দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলত। যুধাজিৎ বলছেন, ‘পরের বছর ক্যালকাটা পার্সি ক্লাবে খেলি। ১৫ ম্যাচে ১৯ উইকেট নিই। প্রণব রায় তখন বাংলার অনূর্ধ্ব ১৬ দলের কোচ। আমার পারফরম্যান্স দেখে ২০১৯ সালে বাংলার অনূর্ধ্ব ১৬ দলে সুযোগ দেন। তারপর ক্যালকাটা পুলিশের হয়ে প্রথম ডিভিশন খেলি। সেবার করোনার জন্য শুধু ওয়ান ডে আর টি-২০ হয়েছিল। সেই থেকে ক্যালকাটা পুলিশ ক্লাবেই খেলছি। বাংলার অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সুযোগ পেয়েছিলাম তারপর।’ আসন্ন রঞ্জি ট্রফির জন্য বাংলার সম্ভাব্য সিনিয়র দলেও ডাক পেয়েছেন ডানহাতি পেসার।

ছোট থেকেই কি পেসার হতে চেয়েছিলেন? ‘ক্রিকেট সফর সহজ ছিল না। প্রচুর বাধাবিপত্তি ছিল। সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে আসতে হয়েছে। তবে ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল, ফাস্টবোলার হব’, সাফ বলছেন যুধাজিৎ।

গত মরশুমে বোর্ডের টুর্নামেন্ট বিনু মাঁকড় ট্রফিতে ৫ ম্যাচে ৮ উইকেট নেন। কোচবিহার ট্রফিতে ৬ ম্যাচে ২৪ উইকেট নিয়ে জাতীয় নির্বাচকদের নজরে পড়েন। যুধাজিৎ বলছেন, ‘গত মরশুমে বোর্ড ম্যাচ থাকায় খুব বেশি ক্লাবের ম্যাচ খেলতে পারিনি। ক্লাবের হয়ে ৯ ম্যাচে ১৯ উইকেট নিয়েছিলাম।’

প্রিয় বোলার কে? যুধাজিৎ বলছেন, ‘ডেল স্টেন। কোনও দিন ওঁর সঙ্গে দেখা হলে জানতে চাইব, কী করে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে এত নিখুঁত লাইন-লেংথে এবং স্যুইং মিশিয়ে বল করতেন। পেসারদের কারও বলে পেস থাকে, কারও হাতে স্যুইং থাকে। কারও আবার দুটোই থাকে, কিন্তু বলটা জায়গায় রাখতে পারে না। ডেল স্টেন তিনটিই পারতেন এবং দুর্দান্ত পারতেন।’

অভিষেক পোড়েল প্রথম তাঁকে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার খবরটা দেন। ঠাকুমা, বাবা, মা ও দিদি – পরিবারের সকলেই খুব খুশি। সেরা অস্ত্র কী? যুধাজিৎ বলছেন, ‘আমার নিজের সবচেয়ে বড় শক্তি আউটস্যুইং। এক জায়গায় বল ফেলে আউটস্যুইং করিয়ে ব্যাটারদের প্রাণ ওষ্ঠাগত করে তুলতে পারলে আনন্দ পাই।’ যোগ করলেন, ‘দেশের প্রতিনিধিত্ব করা একটা বিরাট ব্যাপার। আমার দক্ষতায় নির্বাচকেরা আস্থা রেখেছেন। দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।’

নবনালন্দা হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। কলেজে ভর্তি হয়েছেন যুধাজিৎ। রবিকান্ত সিংহ, ঈশান পোড়েল, রবি কুমারদের মতো বাংলার এক ঝাঁক পেসার সাম্প্রতিক অতীতে জাতীয় অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সুযোগ পেয়েছেন। কেউ হারিয়ে গিয়েছেন। কেউ দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছেন। যুধাজিৎ সতর্ক। বলছেন, ‘এই ব্যাপারটা মাথায় রয়েছে। তবে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দলের এই মঞ্চটা কাজে লাগাতে চাই। ভুল করতে চাই না। আশা করছি হতাশ করব না।’

বাংলার ময়দানও বহুদিন পরে এক বাঙালি ক্রিকেটারকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।

ওয়ান ডে সিরিজের জন্য ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দল: মহম্মদ আমন (অধিনায়ক), রুদ্র পটেল (সহ অধিনায়ক), সাহিল পরখ, কার্তিকেয় কেপি, কিরণ চোরমালে, অভিজ্ঞান কুণ্ডু (উইকেটকিপার), হরবংশ সিংহ পাঙ্গালিয়া (উইকেটকিপার), সমিত দ্রাবিড়, যুধাজিৎ গুহ, সমর্থ এন, নিখিল কুমার, চেতন শর্মা, হার্দিক রাজ, রোহিত রাজাওয়াত ও মহম্মদ এনান।

আরও পড়ুন: ২ গোলে এগিয়ে থেকেও টাইব্রেকারে হার, ডুরান্ড ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ মোহনবাগানের

আরও দেখুন