শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার না দেখা পর্যন্ত শান্তি হবে না: সারজিস

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘আমার ভাই-বোনদেরকে যারা হামলা করেছে- সেটা পুলিশ, ছাত্রলীগ বা শেখ হাসিনার দোসর যাই হোক না কেন তাদের বিচার না দেখা পর্যন্ত আমাদের শান্তি হবে না। যেসব চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা আমাদের ভাইদের ওপর গুলি চালিয়েছে- তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর এলাকায় পৌর ওসমানী স্টেডিয়ামে ছাত্র-নাগরিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

তরুণদেরকে লাঠিয়াল বাহিনী হতে নিষেধ করে সারজিস আলম বলেন, ‘আমার সামনে যারা দাঁড়িয়ে রয়েছে, তারা আজকে থেকে ২০ বছর পরে একেকজন সংসদের এমপি-মন্ত্রী হবে- এমনকি এই নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রধানমন্ত্রী হবে। তবে আমাদের তরুণ প্রজন্মের একটি অংশকে কিছু কিছু মানুষ নিজের স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য তাদেরকে বিভিন্ন নামে নামাঙ্কিত করছে। যেমন একটি নাম হচ্ছে কিশোর গ্যাং। আমাদের যে ভাইদেরকে কিশোর গ্যাং বলে অভিহিত করা হয়, তারাতো কিশোর- তাদের জ্ঞানে কিংবা চিন্তার সীমাবদ্ধতা রয়েছে বা থাকতে পারে। কিন্তু যারা তাদেরকে ব্যবহার করছে তাদের তো উদ্দেশ্য স্পষ্ট, তারা আমার এই ছোট ভাইদেরকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। স্পষ্ট করে বলতে চাই, আপনি কারও লাঠিয়াল বাহিনী হবেন না। আপনি নিজের যোগ্যতায় স্বাবলম্বী হবেন, কোনও ভাইয়ের ওপরে নয়।’

নারায়ণগঞ্জে মাদক ও চাঁদাবাজির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই নারায়ণগঞ্জে অল্প কিছু মানুষ বৃহৎ গোষ্ঠীকে জিম্মি করে বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালিত করছে। এখানে ফুটপাত থেকে শুরু করে গার্মেন্ট কিংবা বিভিন্ন মার্কেট থেকে শুরু করে অটোস্ট্যান্ডে যে চাঁদাবাজি চলে সেই চাঁদাবাজি ছাত্র-জনতা সমর্থন করে না। এই নারায়ণগঞ্জে নাকি রমরমা মাদকের ব্যবসা চলে। যে ব্যক্তি বা সেসব সিন্ডিকেট মাদকের ব্যবসা করে তাদের পক্ষে ছাত্র-জনতা দাঁড়াতে পারে না।’

বর্তমানে অন্যকোনও দলের স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডকে শিক্ষার্থীরা সমর্থন করবে না উল্লেখ করে এই সমন্বয়ক বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়েছিল কিনা? ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা অন্যায়ভাবে জেলখানায় রেখেছিল কিনা? ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা অসংখ্য মানুষকে ডিবি হেফাজতে ‘হাউন’ আঙ্কেলের কাছে পাঠিয়েছিল কিনা? ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে চাঁদাবাজি করেছিল কিনা? হাসিনা সরকারের পতনের পরে আজকে যদি অন্য কোন মানুষ অন্য কোন রূপে এই কাজগুলো করে, আমরা কি সেই কাজের সমর্থন করি?’ এর জবাবে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা না বলে জবাব দেন।

তরুণ প্রজন্মকে বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, ‘তরুণ প্রজন্ম সুন্দর বাংলাদেশ চায়। আমরা তরুণ প্রজন্মকে বার্তা দিতে চাই, যখন প্রয়োজন হবে রাজপথে নামবো, যখন প্রয়োজন হবে স্লোগান দেবো, যখন সময়ের প্রয়োজন হবে মা-বাবাকে বলে জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমে পড়বো। যখন প্রয়োজন পড়বে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মতো অন্য ফ্যাসিস্টদেরকে রাজপথ থেকে দেশ ছাড়া করবো। যখন প্রয়োজন পড়বে এই ২০২৪ এর মতো গণঅভ্যুত্থান ঘটাবো। তবে তরুণ সমাজকে যোগ্য হিসেবে গড়ে উঠতে হলে সুশিক্ষায়-স্বশিক্ষায় নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।’ এ সময় তিনি পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়ারও আহ্বান জানান। 

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক শাহীন মিয়া, সামিয়া মাসুদ মম, আসিফ আদনান, ছাত্র ফেডারেশনের জেলার সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা, তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী নীরব রায়হান সহ প্রমুখ।

এর আগে, নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও আহত ব্যক্তিদের খোঁজখবর নিয়েছেন সারজিস আলম। নিহতদের জন্য বিচার পেতে সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দেন।