শ্রমিক অসন্তোষ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে: উপদেষ্টা

শ্রমিক অসন্তোষ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। জুট ব্যবসা দখল বা বহিরাগত কেউ শ্রমিকদের উসকে দিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টির অপচেষ্টা করলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন শ্রম উপদেষ্টা।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো প্রতিদিন বসছে। গতকালও (বুধবার) আমরা বসেছিলাম। আমরা ছয় জন উপদেষ্টা বসেছিলাম। গতকাল একটি বড় কোম্পানি বেতন দিতে না পারার কারণে গাজীপুর-আশুলিয়ায় অসন্তোষ হয়েছিল। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটে। সেখানেই বস থেকেই আমাদের অর্থ উপদেষ্টা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে কথা বলে, ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য ৭৯ কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করেছেন। এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। সে কারণে আজ শ্রমিক অসন্তোষটা কিছুটা কম রয়েছে। তারপরও আমরা নিবিড়িভাবে মনিটর করছি।

তিনি আরও বলেন, যে সমস্যাগুলো রয়েছে, সেগুলো সমাধানের জন্য একটি পর্যালোচনা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে শ্রমিক নেতারা, মালিকপক্ষ ও দুজন আইনজীবীও রয়েছেন। এই কমিটি শ্রম ভবনে বসবে। আমরা শ্রমিক ভাইদের আহ্বান জানাবো, কোনও অভিযোগ থাকলে সেখানে জানানোর জন্য। শ্রম আইনের মধ্যে যেসব সমস্যা সমাধান করা যায়, সেটার উদ্যোগ নেওয়া হবে। আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে আসবে। শ্রমিকদের প্রকৃত সমস্যার সমাধান আমরা দিতে পারবো।

শ্রম কর্মসংস্থান সচিব বলেছেন, শ্রমিক অসন্তাষের জন্য বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে এমন কিছু তথ্য পেয়েছি, যেটা ওই বিষয়টিই ইঙ্গিত করে। এটা একটি সিজিনাল বিজনেস। মার্কেটে যে প্রোডাক্ট যাবে, সেটা তিন মাস আগেই প্রস্তুত করতে হয়। সেই অর্ডারগুলো অনেক জায়গায় বাতিল হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছু নির্দিষ্ট দেশের বায়াররা অর্ডারটা নেওয়ার জন্য লবিং করছে, উঠে পড়ে লেগেছে।

দ্রুত সময়ের মধ্যে অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে আসবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, কোনও শ্রমিক তার ফ্যাক্টরিতে এভাবে হামলা করবে না। কারণ কারখানা বন্ধ হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরাই হন। তিনি জানেন কারখানা বন্ধ হলে মাস শেষে তিনি বেতন পাবেন না। কোনও শ্রমিক কোনও কারখানায় হামলা করেছেন, এমন কোনও খবর আমরা পাইনি। বরং দেখেছি বেকার যুব সংঘের নামে অনেকে বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে হামলার চেষ্টা করেছে। অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকরাই তাদের প্রতিহত করেছেন।

তিনি বলেন, গাড়ি ভাঙচুর ও কারখানায় হামলার অভিযোগে বেকার যুব সংঘের একজনকে নেত্রকোনা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা গেছে তিনি ছাত্রলীগের পদধারী নেতা ছিলেন। কাজেই এখানে ষড়যন্ত্র যেমন আছে শ্রমিকদের প্রকৃত দাবিও কিছু রয়েছে। কারণ দীর্ঘ ১৬ বছর তারা বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হওয়ায় তারা কথা বলার স্বাধীনতা পেয়েছেন। আমরা সেটাকে সাধুবাদ জানাই।

এটা পদ্ধতির মাধ্যমে দাবিগুলো আমাদের কাছে এলে তার সমাধান করবো জানিয়ে তিনি বলেন, কারখানার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই, এমন বহিরাগত ও জুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে যারা অসন্তোষ সৃষ্টি করছে ও শ্রমিকদের উসকে দিচ্ছে, সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।