রাজধানীতে বাসাবাড়িতে গ্যাস সংকটে ভোগান্তি কমছেই না

‘সকালে উঠেই দেখি টিমটিম করে জ্বলছে গ্যাসের চুলা,  রান্না বসাতে বসাতেই গ্যাস নাই। এরপর সারাদিন আর চুলা জ্বলে না। বেলা তিনটার পর আবার আসতে শুরু করে গ্যাস। এইভাবেই চলছে দিনের পর দিন।’ রামপুরার বাসিন্দা কাজী মিলি এইভাবেই তার গ্যাস সংকটের কথা জানান। এই অভিযোগ শুধু মিলির না। মানিকনগর থেকে সোমা ইসলাম, পুরান ঢাকার বাসিন্দা রহমত আলী মৃধা, বনশ্রীর বাসিন্দা মিঠি চৌধুরী একই অভিযোগ করেন। এই চিত্র শুধু এই কয়েকটি এলাকার নয়। ইস্কাটন,  মধুবাগ, ভুতেরগলি, ইন্দিরা রোডসহ রাজধানীর বহু এলাকায় বাসাবাড়িতে গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। সোমা জানান, বিকল্প উপায়ে রান্নার জন্য বিদ্যুতের চুলা কিনে নিয়েছি। ভাতটা রাইস কুকারে করে নেই। কিন্তু নতুন করে লোডশেডিং শুরু হওয়ায় সেটাও এখন করতে পারি না। মাঝে মাঝে বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে খেতে হয়৷

প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার পেট্রোবাংলা জানায়, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এলএনজি সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এর ফলে চট্টগ্রাম, বাখরাবাদ গ্যাস ও তিতাস গ্যাস এলাকায় গ্যাসের চাপ কম থাকতে পারে। সামিটের এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় এমনিতেই গ্যাস সংকট আগে থেকেই ছিল। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ কম হওয়ায় সেই সংকট আরও ঘনীভূত হয়৷

সূত্র জানায়, সব মিলিয়ে ঢাকা শহরে এখন গ্যাসের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাসের চাহিদা আছে। কিন্তু সরবরাহ হচ্ছে গড়ে। দুই থেকে আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এরমধ্যে আজকের হিসাবে পেট্রোবাংলা জানায়, তারা গ্যাস সরবরাহ করেছে ২৩৮৬ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এই ঘাটতি মেটাতে গিয়ে রেশনিং করা ছাড়া এই মুহূর্তে বিকল্প কোনও উপায় নেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের৷

পেট্রোবাংলার হিসাবে,  বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের অধীন ৫টি গ্যাস ক্ষেত্রের গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা আছে ৮৫১ মিলিয়ন ঘনফুট,  কিন্তু তারা উৎপাদন করতে পারছে ৫৫১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। একইভাবে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের অধীনে ৫টি গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১১৮, কিন্তু এইসব ক্ষেত্র থেকে কিছুটা গ্যাস বেশি আসছে, পাচ্ছে ১২৮ মিলিয়ন ঘনফুট,  বাপেক্সের অধীনে ৮টি গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১৪৫ মিলিয়ন, এখন পাওয়া যাচ্ছে ১২৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।  এর বাইরে আইসি-এর অধীনে চার গ্যাস ক্ষেত্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১৬১৫ মিলিয়ন, কিন্তু একইভাবে পাওয়া যাচ্ছে ১০২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। আর এলএনজি আসার কথা ১১০০ মিলিয়ন,  পাওয়া যাচ্ছ মাত্র ৩৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।  বৈরী পরিস্থিতির উন্নতি ঘটায় এক্সিলারেট তাদের এলএনজি কিছুটা সরবরাহ শুরু করেছে।

এদিকে ঢাকায় এই গ্যাস ঘাটতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পারভেজ শাহনেওয়াজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এলএনজি টার্মিনালের সমস্যার কারণে এই গ্যাস সংকট বেড়ে গিয়েছিল। আগামীকাল থেকে আশা করছি পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। তিনি বলেন, দুইদিনের ঘাটতিতে পাইপলাইন প্রায় খালি হয়ে গেছে। পাইপলাইনগুলো পূর্ণ গ্যাস পেলে গ্রাহকের ঘাটতি কিছুটা কমে আসবে বলে আমরা আশা করছি।