শূকরের সঙ্গে লড়াইতে হেরে ভূত ডুয়ার্সের চিতাবাঘ, মিলল দেহ, জঙ্গলের উলট পুরাণ

ডুয়ার্সে কার্যত দাপিয়ে বেড়ায় চিতাবাঘ। চিতাবাঘের দাপটে রাতের ঘুম ওড়ে অনেকেরই। তবে এবার শূকরের সঙ্গে লড়াইতেই হেরে গেল সেই চিতাবাঘ। শুধু হারেই নি, ডুয়ার্সে চা বাগান থেকে উদ্ধার হল সেই চিতাবাঘের দেহ। অভিজ্ঞ বনকর্মীদের দাবি, এই ধরনের ঘটনা সচরাচর দেখা যায় না। সাধারণত বুনো শূকরকেই শিকার করে চিতাবাঘ। আর সেই চিতাবাঘই এভাবে শূকরের হামলায় ধরাশায়ী হবে এটা ভাবাই যায় না। ঠিক কী হয়েছে ঘটনাটি? 

নাগরাকাটা ব্লকের সুলকাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের  বামনডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের  হাতি লাইনের কাছে নাথুয়া রেঞ্জের জঙ্গল সংলগ্ন এলাকাতেই এই ভয়াবহ ঘটনা। সোমবার বনকর্মীরা ওই চিতাবাঘের দেহটি উদ্ধার করেন। তবে চিতাবাঘের মৃত্যুর কারণ জানার পরে হতবাক বনকর্মীরা। এভাবে শিকারের হাতে শিকার হওয়ার ঘটনা সচরাচর দেখা যায় না জঙ্গলে। এটা যেন জঙ্গলের নিজস্ব নিয়মের কিছুটা বিরোধী। খাদ্যের হাতে এভাবে খাদকের মৃত্যুর ঘটনা সাধারণত দেখা যায় না।

স্থানীয়দের মতে, রাতে বন্য শূকরের সঙ্গে চিতাবাঘের লড়াই বাঁধে। এদিকে অত সহজে ময়দান ছাড়তে রাজি হয়নি চিতাবাঘ। কারণ এটা তার নিজের জঙ্গল। এই জঙ্গলে সে রাজ করে। মাঝেমধ্যে শূকরের আর্ত চিৎকার শুনতে পান বনবস্তির বাসিন্দারা। বোঝা যায় চিতাবাঘ শূকর শিকার করছে। কিন্তু ওই রাতে জঙ্গলের চিরাচরিত ব্যাকরণ মেনে সবকিছু হয়নি। 

স্থানীয় এক বাসিন্দা সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, রাত তখন মোটামুটি ১০টা হবে। আচমকা শূকরের বিকট শব্দ শোনা যায়। তার সঙ্গে চিতাবাঘের গর্জন। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে এই রকম শব্দ শোনা যায়। তারপর সব চুপচাপ। এদিকে চিতাবাঘের আওয়াজও বন্ধ হয়ে যায়। এতেই কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হয়েছিল বাসিন্দাদের। তারপর  শূকরেরও আর কোনও শব্দ পাওয়া যায়নি। তবে চা বাগানের কাছে গরুমারার জঙ্গল। অন্যদিকে নাথুয়ার জঙ্গল। রাতে যেন আরও ভয়ঙ্কর হয়ে যায় এই জঙ্গল। খুব দরকার না পড়লে রাতে বিশেষ বের হন না বাসিন্দারা। হাতি, বাইসনের আনাগোনা লেগেই থাকে। সবটাই যেন কেমন গা ছমছমে। ওই রাতেও আর বাড়ির বাইরে বের হননি বাসিন্দারা।

এদিকে সকালেই বাসিন্দারা দেখেন চিতাবাঘটির দেহ পড়ে রয়েছে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে বনদফতরের কর্মীরা মোটামুটি এটি নিশ্চিত হয়ে যান যে চিতাবাঘের সঙ্গে লড়াই বেঁধেছিল শূকরের। কিন্তু কোনওভাবে শূকরের হামলায় পেরে ওঠেনি চিতাবাঘ। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে চিতাবাঘ। কার্যত বিরল ঘটনা বলেই মনে করছেন বাসিন্দারা।