স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দিয়েছিলেন জমি, চিকিৎসা নিতে গিয়ে ‘মারধরের শিকার’

প্রায় আড়াই দশক আগে লৌহজং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিজের ২৮ শতক জমি নামমাত্র মূল্যে দান করেছিলেন নুরুল ইসলাম শেখ। অথচ সেখানেই বৃদ্ধ বয়সে চিকিৎসা নিতে এসে চিকিৎসকের হাতে মারধরের শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ৭০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ।

বুধবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্টরা ঘটনাটি দুঃখজনক উল্লেখ করে বলছেন, ভুক্তভোগী ওই বৃদ্ধ ও তার স্বজনদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ওই চিকিৎসক।

বৃদ্ধ নুরুল ইসলাম শেখের অভিযোগ, বুধবার দুপুরের দিকে টিকিট কেটে লৌহজং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ডা. সাইফুল্লাহ খালিদ সাদীর কক্ষের সামনে লাইনে দাঁড়ান। এ সময় লাইনের অন্য রোগীরা বৃদ্ধ বিবেচনায় তাকে আগেভাগে ডাক্তার দেখার সুযোগ করে দেন। কক্ষে ঢুকে তিনি দেখতে পান ডা. সাদী অন্য এক নারী রোগীকে দেখছেন। তাই পাশের একটি খালি চেয়ারে বসেন নুরুল ইসলাম। এ সময় ডা. সাদী রেগে যান, তিনি ওই বৃদ্ধের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন।

এসময় নুরুল ইসলাম প্রতিবাদ করলে ওই চিকিৎসক তাকে মাথায় কিল-ঘুষি ও পিঠে থাপ্পড় দিয়ে কক্ষ থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ তার। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বজন ও গ্রামবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। 

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃদ্ধকে মারধর করায় সেবা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসকের মারধরে বৃদ্ধ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে মাথায় পানি দিয়ে কিছুটা সুস্থ করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আড়াই দশক আগে নুরুল ইসলাম শেখ ২৮ শতাংশ জমি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণে নামমাত্র মূল্যে দেন। এখন পরিবার নিয়ে ভাড়ায় পরের জায়গায় ঘর তুলে বসবাস করেন। সেই নুরুল ইসলাম নিজের বসতবাড়ি হাসপাতালকে দিয়ে সেখানে সেবা নিতে এসে মারধরের শিকার হলেন, বিষয়টি খুবই নিন্দনীয়।’ 

‘বৃদ্ধকে মারধরের’ কারণ জানতে চাইলে লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. সাইফুল্লাহ খালিদ সাদী নিজেকে পাশের শ্রীনগর উপজেলার বাসিন্দা উল্লেখ করে সাংবাদিকদের সঙ্গেও তর্কে জড়ান। তিনি আরও দাবি করেন, ‘বৃদ্ধ নুরুল ইসলামই উল্টো তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন।’ তিনি ওই বৃদ্ধকে মারধরের কথাও অস্বীকার করেন। 

তিনি বলেন, ‘তেমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। চাচা (নুরুল ইসলাম শেখ) আমার দূর-সম্পর্কের আত্মীয় হন। ফিজিক্যালি কোনও মারধরের ঘটনা ঘটেনি। উনি রুমে ঢুকে প্রাইভেসি নষ্ট করেছেন। যেহেতু একজন নারী রোগী ছিলেন রুমে, আমি তাকে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছি। উনি বের না হয়ে তর্ক করেন, আমাকে তুই-তোকারি করেন। আমি সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে বাধ্য হয়েছি, তার গায়ে হাত দিয়ে বলেছি— আপনি বের হয়ে যান চাচা।‘

‘এটা একটা অপ্রীতিকর ঘটনা’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বিকালে চাচার সঙ্গে আমার মিচুয়াল হয়ে গেছে। আমি নিজে থেকেই তার কাছে ক্ষমা চেয়েছি এবং তার সাথে বুকে বুক মিলিয়ে মিচুয়াল করেছি।’ বিষয়টি যেহেতু ‘মিমাংসা হয়ে গেছে’; তাই এই বিষয়ে ‘নিউজ না করাই ভালো’ বলেও প্রতিবেদককে পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মাসুদ আল মারজান বলেন, ‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা এটি। তবে ভুক্তভোগী বৃদ্ধ ও তার স্বজনদের ডেকে ডা. সাদী ক্ষমা চেয়েছেন।’