Jadavpur University ragging: ‘পুরষাঙ্গের দৈর্ঘ্য, বাবা-মায়ের যৌনমিলনের দিন’- যাদবপুরের ‘ইন্ট্রো’ আদতে কী? বিস্ফোরক ছাত্র

‘ইন্ট্রো’, ‘ইন্ট্রো’, ‘ইন্ট্রো’ – বুধবার রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যুর পর থেকে যেন ওই একটা শব্দ বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, ‘ইন্ট্রো’ শব্দটা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়া পড়ুয়া বা আবাসিকদের কাছে স্রেফ ইংরেজি শব্দ ‘ইন্ট্রোডাকশন’-র (পরিচিতি) সংক্ষিপ্ত রূপ নয়। ওই একটা শব্দ তাঁদের কাছে বিভীষিকা। ওই একটা শব্দ কত প্রতিভার ফুলকে বিকশিত হতে হয়নি, কত পড়ুয়ার স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে, তার কোনও ইয়ত্তা নেই বলে দাবি করেছেন পড়ুয়াদের একাংশ।

কিন্তু কী এই বিভীষিকার ‘ইন্ট্রো’? বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়া। যিনি স্নাতক স্তরের ছাত্র বলে জানিয়েছেন। ওই পড়ুয়া জানিয়েছেন, যাদবপুরে ভরতি হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে রোজ বাড়ি থেকে যাতায়াত করতেন (বাড়ি থেকে দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার)। অবশেষে গত বছর হস্টেলে থাকার সুযোগ থাকা পেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা যে আদতে ‘সুযোগ’ নয়, বরং বিভাষিকা, তা বুঝতে একটা রাতই যথেষ্ট ছিল বলে জানিয়েছেন ওই পড়ুয়া।

আরও পড়ুন: JU student death: স্বপ্নদীপের মৃত্যুতে ধৃত JU-র প্রাক্তনী, সৌরভের FB অ্যাকাউন্টে আক্রমণ নেটপাড়ার

দুঃখ, যন্ত্রণা, আতঙ্কের মধ্যেই স্নাতক স্তরের ওই পড়ুয়া জানান, হস্টেলে আসার পর খাওয়া-দাওয়া মিটলে ‘ইন্ট্রো’-র জন্য ডাক পড়েছিল। ‘ইন্ট্রো’ বিষয়টা কী, তা বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছিল ওই পড়ুয়ার রুমমেটকে। যিনি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে যাদবপুরে পড়াশোনা করেন (সিনিয়র)। আর ওই সিনিয়র দাদা যা বলেছিলেন, তাতে আতঙ্কের চোরাস্রোত বয়ে গিয়েছিল তাঁর শরীর দিয়ে।

ওই পড়ুয়া জানিয়েছেন, ‘ইন্ট্রো’-র নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিদিন ঘড়ির কাঁটা ১১ টা বা ১২ টা ছুঁলে হস্টেলের প্রতিটি দরজায় ধাক্কা দিতে হয়। সেইসময় নামমাত্র পোশাক পরে থাকতে হয় পড়ুয়াদের (উল্লেখ্য, স্বপ্নদীপের নগ্ন দেহ উদ্ধার করা হয়)। সিনিয়ররা দরজা খোলার পর গড়গড় করে কয়েকটি বিষয় মুখস্থ বলতে হয়। কী কী বলতে হবে, সেটার একটা নির্দিষ্ট ‘ফর্ম্যাটও’ আছে। নিজের নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, জন্মতারিখ, বাবা-মায়ের যৌনমিলনের তারিখ, শিক্ষাগত যোগ্যতা বলতে হয়। সেখানেই রেহাই মেলে না। নিজের শারীরিক গঠনের বর্ণনা দিতে হয়। আর ‘ইন্ট্রো’-র সময় মুখ ফসকে ইংরেজি শব্দ বেরিয়ে গেলেই করা হয় শারীরিক অত্যাচার। দরজার খিল দিয়ে হাঁটুতে মারা হয়। নয়তো কান ধরে ওঠবোস করার নিদান দেয় সিনিয়ররা।

আর ‘ইন্ট্রো’-র নামে তথাকথিত ‘ভালো’ ছেলেদের অত্যাচারের বহর সেখানেই শেষ হয় না বলে ওই পড়ুয়া জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, এক সিনিয়র দাদার থেকে থেকে জানতে পেরেছিলেন যে যতদিন না হস্টেলের প্রতিটি পড়ুয়া নিমেষের মধ্যে নিজের পুরুষাঙ্গের আকৃতি তথা দৈর্ঘ্য বলতে পারছেন, ততদিন ‘ইন্ট্রো’ চলতে থকবে। প্রতিদিনের ‘ইন্ট্রো’-র মেয়াদ হয় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। রাত ২ টো ৩০ মিনিট চলে ‘ইন্ট্রো’। সঙ্গে আরও নানারকমভাবে হেনস্থা করা হয়। ওই পড়ুয়া জানিয়েছেন, ক্লাসের সব মেয়েদের (‘মামনি’ হিসেবে বলা হত) বিষয়ে খুঁটিনাঁটি তথ্য দিতে হয় সিনিয়রদের। সপ্তাহে একদিন সিনিয়রদের জল ভরে দিতে হবে। একেবারে ছোট-ছোট চুল কাটতে হবে (স্বপ্নদীপের বাবারও অভিযোগ যে ছেলেকে চুল কাটতে জোরজুলুম করা হয়েছিল)।

তবে স্বপ্নদীপকেও সেরকম বিভীষিকার শিকার হতে হয়েছিল কিনা, র‍্যাগিংই তাঁর প্রাণ কেড়েছে কিনা, তা এখনও প্রমাণিত হয়নি। তবে শুক্রবার রাতে যে সৌরভ চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে যাদবপুর থানার পুলিশ, স্বপ্নদীপের বাবার দায়ের করা এফআইআরে তার নাম ছিল। তার নেতৃত্বেই ছেলেকে অত্যাচারিত হতে হয়েছিল বলে দাবি করেছেন স্বপ্নদীপের পরিবার। যিনি রবিবারই হস্টেলে এসেছিলেন। আর বুধবার সেই হস্টেল থেকে নিথর দেহ বেরিয়ে এসেছে।

(বিশেষ দ্রষ্টব্য: ওই পড়ুয়া নিজের নাম গোপন করেননি। তবে সুরক্ষার স্বার্থের ওই পড়ুয়ার নাম প্রকাশ করল না হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা।)

আরও পড়ুন: Jadavpur ragging incident: ‘এগুলি ওই তিন রাত আমার সঙ্গে চলছে,আমি ভীত’, যাদবপুরের হস্টেলে ‘কিছু দাদা’-দের নিয়ে সরব পড়ুয়া