রেশন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। এর আগে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ করেছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। এরপরই শুভেন্দু আজ অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সংস্থার থেকে বাঁচাতেই জ্যোতিপ্রিয়কে ২০২১ সালে খাদ্যমন্ত্রী করেননি মমতা। তবে বেআইনি ভাবে টাকা তোলা বন্ধ করতে চাননি মমতা। তাই জ্যোতিপ্রিয়কে পশ্চিমবঙ্গের প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান করা হয়। সেখানেই না থেমে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রাক্তন আইএএস অফিসার এ সুব্বিয়াকে পশ্চিমবঙ্গ প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ কর্পোরেশনের এমডি করা হয়। আমলা নিয়োগের দায়িত্বে থাকা কর্মী ও প্রশাসনিক সংস্কার বিভাগের মন্ত্রী মমতা নিজেই। তাহলে মুখ্যমন্ত্রী নিজে না চাইলে এই দুর্নীতিগ্রস্ত অবসরপ্রাপ্ত আমলাকে পশ্চিমবঙ্গের প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ কর্পোরেশনে নিয়োগ করা হত না। (আরও পড়ুন: কেন গ্রেফতার হলেন জ্যোতিপ্রিয়? মধ্যরাতে আপ্তসহায়কের বয়ানে ঘুরল ‘খেলা’)
প্রসঙ্গত, শুক্রবার ভোর রাত ৩টে নাগাদ রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে গ্রেফতার করে সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে যান ইডি গোয়েন্দারা। উল্লেখ্য, রেশন দুর্নীতির তদন্তে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিধাননগরের বাড়িসহ মোট ৮ জায়গায় তল্লাশি শুরু করেছিলেন ইডি আধিকারিকরা। রিপোর্ট অনুযায়ী, দীর্ঘক্ষণ ধরে জেরা চললেও মধ্যরাত পর্যন্ত নাকি জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতার করার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি ইডি। তবে পরিস্থিতি বদলে যায় মধ্যরাতের পর। কী হয়েছিল রাত ১২টার পর? জানা যাচ্ছে, জ্যোতিপ্রিয়র আপ্তসহায়ক অমিত দে-র বাড়িতেও গতকাল হানা দিয়েছিল ইডি। মন্ত্রীর পাশাপাশি তাঁর সহযোগীকেও জেরা করছিলেন ইডি কর্তারা। সেই আবহে রাতের দিকে অমিতের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পান ইডি কর্তারা। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই রাত ১২টার পর নতুন করে জেরা করা হয় জ্যোতিপ্রিয়কে। তবে সেই সব প্রশ্নের জবাব দিতে চাননি মন্ত্রী। এরপরই দিল্লিতে সংস্থার সদর দফতরে মন্ত্রীর অসহযোগিতার কথা জানান তদন্তকারীরা। আর তারপরই গ্রেফতার করা হয় তৃণমূলের এই বর্ষীয়ান নেতাকে।
এর আগে রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে আগেই গ্রেফতার হয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান। রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে বাকিবুর রহমানের গ্রেফতারির পর বার বার উঠে এসেছিল জ্যোতিপ্রিয়র নাম। এদিকে সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বাকিবুর রহমানের অন্তত ১০০ কোটির সম্পত্তির হদিশ পেয়েছে। নামে, বেনামে, আত্মীয়দের নামে এই বিপুল সম্পত্তি। এগুলি রেশন দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করার জন্য করা হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, অন্তত ৬টি সংস্থায় শেয়ার রয়েছে বাকিবুরের। সেই শেয়ার মিলিয়েই বাকিবুরের সম্পত্তি প্রায় ৫০ কোটি। নিউ টাউন, রাজারহাট, পার্কস্ট্রিটে একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে তার। বাকিবুরের একাধিক হোটেল, পানশালাও রয়েছে। বিদেশেও তার সম্পত্তি রয়েছে বলে খবর। প্রসঙ্গত, বাকিবুরের ফ্ল্য়াট থেকে সরকারি দফতরের প্রচুর স্ট্য়াম্প পাওয়া গিয়েছে। সেই স্ট্যাম্প কী জন্য ব্যবহার করা হত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই আবহে বকিবুরের দুর্নীতির সঙ্গে মন্ত্রী যোগের অভিযোগ বারংবার উঠছে। এরই মাঝে জ্যোতিপ্রিয়র গ্রেফতারির পর দাবি করা হচ্ছে শান্তিনিকেতনে ‘দোতারা’ নামক একটি বাড়ি রয়েছে।