তাকেই সম্মান করবেন, যে আপনাকে সম্মান করবে: ম্যাথুস

অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের ‘টাইমড আউট’ নিয়ে ম্যাচের পুরোটা সময়ে ক্ষুব্ধ দেখা গেছে শ্রীলঙ্কান দলকে। তাদের শরীরী ভাষায়ও ছিল রাগ এবং ক্ষোভ। এমন ক্ষোভে ম্যাচ শেষেও বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলাননি লঙ্কান ক্রিকেটাররা। জয়-পরাজয় যাই হোক না কেন, দুই দলই ম্যাচ শেষে হাত মেলায়, এটাই ক্রিকেটের সাধারণ সৌজন্যতা। কিন্তু সোমবার (৬ নভেম্বর) ম্যাচ শেষে শ্রীলঙ্কার পুরো দল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত না মিলিয়ে ড্রেসিংরুমে চলে যায়। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন শুধু লঙ্কান কোচরাই। ম্যাচ শেষে ম্যাথুস জানিয়েছেন, সম্মান তাকেই করবেন, যে আপনাকে সম্মান করবে।

এদিন ৭২ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর শ্রীলঙ্কার হাল ধরেছিলেন চারিথা আসালাঙ্কা ও সাদিরা সামারাবিক্রমা। ৪১ রানে সামারাবিক্রমাকে আউট করে ৬৩ রানের জুটি ভাঙেন সাকিব। এরপরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো টাইমড আউটের ঘটনাটি ঘটে। নতুন ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস টাইমড আউট হন। ম্যাথুস নির্দিষ্ট সময়ে মাঠে প্রবেশ করলেও বলের মুখোমুখি হতে দেরি করায় তাকে আউট দেন আম্পায়ার। যদিও সাকিবের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই আম্পায়াররা এমন সিদ্ধান্ত দিতে বাধ্য হয়েছেন। ম্যাথুসকে ‘টাইমড আউট’ করাটা ক্রিকেটীয় চেতনার পরিপন্থি বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

ম্যাথুসের এই আউট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বেশ সরব হয়ে উঠেছে। সেই প্রসঙ্গে সাকিব বলেন, ‘বিতর্ক হবেই, আজকের এই সিদ্ধান্ত ম্যাচে আমাদের সাহায্য করেছে সেটি অস্বীকার করার উপায় নেই। এই ম্যাচটা আমাদের কাছে অনেকটা যুদ্ধের মতো ছিল। আমি ভাবিনি এটা ঠিক না বেঠিক। আম্পায়ার আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কি সিরিয়াস কিনা! আমার কাছে ওই সময় যেটা ঠিক মনে হয়েছে আমি তাই করেছি।’

যদিও ম্যাথুস সাকিবের এমন আবেদনকে কাণ্ডজ্ঞানহীন বলেছেন, ‘আমি কোনও ভুল কিছু করিনি। আমি নির্দিষ্ট ২ মিনিটের মধ্যেই উইকেটে গিয়েছিলাম। নিজেকে প্রস্তুতও করেছিলাম। ঠিক সময় ক্রীড়া সরঞ্জামে একটা সমস্যা তৈরি হয়। আমি জানি না সাধারণ জ্ঞানটা কোথায় হারিয়েছিল। অবশ্যই এটা সাকিব ও বাংলাদেশের জন্য অসম্মানজনক। এভাবে যদি তারা এই পর্যায়ে ক্রিকেট খেলতে চায়, তবে তারা ভুল পথেই এগোবে। আইন বলছে, আমাকে ২ মিনিটের মধ্যে প্রস্তুত হতে হবে। আমি সেটাই করেছিলাম। যখন আমার হেলমেট ভাঙা পাওয়া যায়, তখনও ৫ সেকেন্ড সময় বাকি ছিল। পুরো বিষয়টি আমার কাছে কাণ্ডজ্ঞানহীনতা মনে হয়েছে। খেলাটাকে অসম্মানিত করা হয়েছে। তাতে আমি সত্যিই ধাক্কা খেয়েছি।’

এই ঘটনার পরপরই আইসিসি অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ম্যাচের চতুর্থ আম্পায়ারের একটি ব্যাখ্যা প্রকাশ করে। যেখানে আম্পায়ার স্পষ্ট জানান, হেলমেট ভাঙার আগেই নির্দিষ্ট ২ মিনিট সময় পেরিয়ে গেলেও খেলার জন্য ম্যাথুস প্রস্তুত হননি। আম্পায়ারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে ম্যাথুস বলেছেন, ‘আমার কাছে প্রমাণ আছে যে আমি ২ মিনিটের মধ্যেই ক্রিজে ছিলাম। আমি অহেতুক মুখের কথা বলতে আসিনি। আমি এখানে এসেছি প্রমাণ নিয়ে। আগের উইকেটের ক্যাচটা ধরা থেকে আমার ক্রিজে আশা পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ের পাঁচ সেকেন্ড বাকি ছিল হেলমেট ভাঙার আগ পর্যন্ত। আপনারা নিরাপত্তার কথা বলেন, আমি কি নিজের সুরক্ষা চিন্তা করবো না? এই জায়গায় আমার মনে হয় আম্পায়ারদের বড় একটা দায়িত্ব ছিল পুরো বিষয়টা ভালোভাবে যাচাই করার।’

আইসিসিরি নিয়মের মধ্যে থেকে ম্যাথুসকে ‘টাইমড আউট’ করাটা যদি ক্রিকেটীয় চেতনার পরিপন্থি হয়, তাহলে ম্যাচ শেষে লঙ্কানদের আচরণটাকে কী বলবেন! খেলা শেষে লঙ্কান ক্রিকেটাররা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাতই মেলালেন না। এ ব্যাপারে ম্যাথুসের বক্তব্য স্পষ্ট। কারও কাছ থেকে সম্মান না পেলে তাকে সম্মান করার প্রশ্নই উঠে না, ‘আপনি তাকেই সম্মান করবেন, যে আপনাকে সম্মান করবে। তাদের এই খেলাটাকে সম্মান জানানো উচিত ছিল। এই সুন্দর খেলাটার আমরা সবাই দূত। আম্পায়াররাও এর বাইরে নন। যখন আপনি সম্মান করবেন না, নিজের সাধারণ জ্ঞানটা ব্যবহার করবেন না, তখন আসলে কিছুই বলার থাকে না।’