ফারদিনকে হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায়নি : মহানগর ডিবি প্রধান

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নুর পরশ আত্মহত্যা করেছে। তাকে হত্যার করার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘ফারদিন তার বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে আত্মহত্যার ইঙ্গিত দিতো। এমনকি সে পরিবার দ্বারা সীমাবদ্ধ ছিল, যা সে চাইতো না।’

বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবির প্রধান কার্যালয়ে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এবং তার বাবার সঙ্গে ফারদিনের মৃত্যুর তদন্তের বিষয়ে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

মহানগর ডিবি প্রধান বলেন, ‘ডিবি এক মাস ৮ দিন ধরে মামলাটি তদন্ত করছে। আমরা আগেও বলেছি, তার (ফারদিন) স্বাস্থ্যের কথা, মানসিক অবস্থার কথা আপনাদের বলেছি। সে যে বিভিন্ন সময়ে একা একা ঘুরে বেড়িয়েছে। কোথাও কোনও জায়গায় তার সঙ্গে কেউ ছিল না। সে রাত ১০-১১টার দিকে একবার অ্যাটেম নিয়েছিল বাবুবাজার ব্রিজে। কিন্তু সেখানে ওই সময় অনেক লোকজন থাকায় সে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। আবার সে নিজের সঙ্গে নিজেই কথা বলে জনসন রোড, সেখান থেকে গুলিস্তান, সেখান থেকে যাত্রাবাড়ী গেলো। যাত্রাবাড়ী থেকে লেগুনায় করে রাত ২টা ৩৪ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজের এক সাইডে নামে। কিন্তু তখন আমরা আগেও বলেছিলাম—চনপাড়া বস্তিতে সে কখনও যায়নি। আমরা ৩৮ দিন তদন্ত শেষে বলছি—এটা একটি আত্মহত্যার ঘটনা। এখানে কেউ তাকে হত্যা করেনি।’

হারুন অর রশীদ জানান, বুধবার সংবাদ সম্মেলন করার পরে বৃহস্পতিবার ডিবিতে বুয়েটের প্রায় ৩৪ জন শিক্ষার্থী এসেছেন। কীভাবে আত্মহত্যা করেছে, তারা আমাদের কাছ থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রায় তিনঘণ্টা সময় নিয়ে কথা বলেছেন। আমরা তাদের পুরো বিষয়টি বুঝিয়েছি। তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদেরও বুঝিয়েছি,  এই কারণে সে আত্মহত্যা করেছে।

হারুন অর রশীদ বলেন, ‘‘সে কোনও দিন বাবুবাজার ব্রিজ ও সুলতানা কামাল ব্রিজে যায়নি। সে বুশরাকে নামিয়ে দিয়ে রাত সাড়ে ৯টা থেকে একা একা ঘুরে বেড়িয়েছে। এমনকি ফারদিন গত দুই বছরে ৫২২টি নম্বরে কথা বলেছে। আমরা সবার সঙ্গেই কথা বলেছি। ফারদিন উপন্যাস পড়তো, আলবার্ট ফেমো ও নিটসের বই পড়তা। সেখানে সে পরিবার, জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা করেছে। তার এক বান্ধবীকে বলেছিল—৩০ বছরের বেশি কারও বাঁচার এখতিয়ার হওয়া উচিত না। আবার আরেক কথা বলেছে, ‘আমি যদি মারা যাই, বন্ধু সাজ্জাদ সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবে। আরেক জায়গায় তার বন্ধুকে বলেছে, ‘এক শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবা হয়তো বা কেউ…’, আত্মহত্যার কথা বলেছে। এবং সে শুক্রবারেই কিন্তু আত্মহত্যা করেছে।’’

মহানগর ডিবি প্রধান বলেন, ‘ডাক্তারের যে সুরতহাল প্রতিবেদন, সেখানেও কিন্তু তার গায়ে কোনও আঘাত নেই। জামার বুতাম ছিল, ধস্তাধস্তির চিহ্ন নেই, হাতের ঘড়ি, মোবাইল, টাকা সবকিছুই ছিল। সে যে লাফ দিয়ে পড়েছে, সেটাও সিসিটিভি ফুটেজ আপনারা দেখেছেন। সবকিছু মিলিয়ে আমরা বলেছি, এটি একটি আত্মহত্যার ঘটনা। আজকে তার বন্ধুরাও মোটামুটি একমত প্রকাশ করেছেন।’

ভুক্তভোগী ফারদিন ছিল ইন্ট্রোভাট। সে কারও কাছে কিছুই শেয়ার করতো না। তার পরীক্ষার রেজাল্ট যে খারাপ হচ্ছিল সেটিও বলেনি। সে আরও একটি কথা বলেছে, ৯৫ ভাগ মানুষের জীবন পরিবার দ্বারা সীমাবদ্ধ। এটা থাকা ঠিক না। তার পরিবার তাকে বাসায় থাকতে বলতো, সে বাসায় থাকতে চাইতো না। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের তদন্তকারী দল যে সিদ্ধান্তে এসেছে, তাতে হত্যার কোনও লক্ষণ নেই। চনপাড়ায় যাওয়ার লক্ষণ নেই, সেখানে কোনও দিনই যায়নি। অতীতে গত দুই বছরে রাতে যেসব স্থানে ঘুরেছে, সেখানেও যায়নি।’

মামলার বাদী আশ্বস্ত কিনা জানতে চাইলে মহানগর ডিবি প্রধান বলেন, ‘তাকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। তদন্ত কর্মকর্তারা তার বাসায় গিয়ে বলে এসেছেন।’

বুয়েটের শিক্ষার্থীরা কিছু কিছু গ্যাপের কথা বলেছেন। এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্তে সবসময় বলা থাকে—ভবিষ্যতে যদি কোনও উদ্রেক দেখা দেয়, তখন আমরা আবারও তদন্ত করবো। তারা (শিক্ষার্থী) আমাদের গ্যাপ দেখাবে না বলেও তাদের বলেছি। তারা বলার চেষ্টা করেছে, লাশ যে পানিতে পড়েছে, সেটা কেউ দেখেছে কিনা। বা কেউ তাকে ধাক্কা দিয়েছে কিনা। কিন্তু যেহেতু সে (ফারদিন) আত্মহত্যা করবে বলে সারা রাত একা একা ঘুরেছে। সেই জায়গাগুলোতে আগে কখনও যায়নি। তার মনের কথা বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যে ধরনের কথা বলেছে, মেসেজ, মোবাইলে যে কথা বলেছে, আলোচনা করেছে, মোবাইলে ৫২২টি নম্বরে কথা বলেছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে, তার শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। সব মিলিয়ে আমরা এই সিদ্ধান্ত এসেছি যে সে আত্মহত্যা করেছে।’

লেগুনা থেকে দুজন নামার বিষয় পরিষ্কার হওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাত্রাবাড়ীতে যে লেগুনাচালক তাকে নামিয়েছে, আমরা তাকে ১০-১২ বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, কিন্তু এমন কিছু পাইনি।’

বুশরার বিষয়টি জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘বুশরাকে নামিয়ে দেওয়ার পরে বুশরার সঙ্গে তার এমন কোনও কথা হয়নি। শুধু একবার বুশরা জানতে চেয়েছে বাসায় ঠিকমতো গেছে কিনা। উত্তরে ফারদিন মিথ্যা বলেছে। সে শুধু ইয়েস বলেছে। স্বাভাবিকভাবে বুশরার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তার মুক্তি আদালতের বিষয়। আমরা (ডিবি) প্রতিবেদনে জানিয়ে দেবো তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।’