বৈদিক যুগের গণিতশাস্ত্র থেকে জোতির্বিদ্যা, প্রাচীন ভারতের জ্ঞানচর্চার বেশ কিছু শাস্ত্র এবার শেখানো হবে পাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবে। প্রাচীন ভারতের জ্ঞানচর্চাকে শিক্ষাক্রমের অংশ করা নিয়ে দেশ জুড়ে বাদানুবাদ চলছে। এই বিতর্কের মধ্যেই ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম (আইকেএস) নিয়ে খসড়া প্রকাশ করল ইউজিসি বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে আগেই বিভিন্ন মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। এই খসড়া প্রকাশের সেই প্রতিবাদই আরও জোরাল হয়ে উঠল। খসড়াটি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামতও চাওয়া হয়েছে। তার উপরে ভিত্তি করেই নির্দেশিকা চূড়ান্তা করা হবে বলে মনে করছেন একাংশ।
খসড়া নির্দেশিকায় জানানো হয়, ভারতের ঐতিহ্যকে চর্চায় ফিরিয়ে আনতেই এই প্রচেষ্টা। নির্দেশিকার শুরুতেই চেয়ারম্যান জগদীশ কুমারের কথায়, ভারতের প্রাচীন সাহিত্য, গণিতশাস্ত্র, স্থাপত্যবিদ্যা ইত্যাদি বেশ প্রাচীন। গত শতাব্দীতেই এগুলির চর্চা বন্ধ হয়ে যায়। তাই এগুলির চর্চা আবার শুরু করতে হবে। আধুনিক বিষয়ের সঙ্গে প্রাচীন শাস্ত্র পড়ানোর পিছনে মূলত এটাই উদ্দেশ্য মঞ্জুরি কমিশনের।
পড়ুয়াদের পড়ানোর আগে শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও রিফ্রেশার ও ইনডাকশন কোর্স করতে হবে। তাতে আধুনিক অঙ্কের সঙ্গেই কষতে হবে বৈদিক যুগের অঙ্ক। পাশাপাশি বৈদিক যুগের শুল্কসূত্রও থাকবে কোর্সে। জৈব রসায়ন যাদের বিষয়, তাঁদের শিখতে হবে আয়ুর্বেদের বিভিন্ন অংশ। নতুন যে শিক্ষকদের ইউজিসি নিয়োগ করছে তাঁদের জন্য কেরিয়ার অ্যাডভান্সমেন্ট কোর্স করানো হবে। আর যাঁরা ইতিমধ্যেই ইউজিসির শিক্ষক, তাঁদের জন্য থাকছে এই রিফ্রেশার কোর্সটি। প্রতিটি শিক্ষককেই বাধ্যতামূলকভাবে ইনডাকশন কোর্স করতে হবে। পাশাপাশি, নির্দিষ্ট সময় অন্তর করতে হবে রিফ্রেশার কোর্সটি।
এছাড়াও নির্দেশিকায় বলা হয়, আইকেএস শিক্ষাক্রমের ১০ শতাংশ সময় ইনডাকশন কোর্সে দিতে হবে। অর্থাৎ সময়ের হিসেবে প্রায় ১৮-২০ ঘণ্টা এই কোর্সে ব্যয় করতে হবে।
ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা এই নিয়ে সরব হয়েছেন। দিল্লির রাজধানী কলেজের পলিটিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক রাজেশ ঝাঁ-র কথায়, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ও জ্ঞানের উপরেই ইউজিসির শিক্ষাক্রম তৈরি করা উচিত। তা না করে পিছনের দিকে এগোতে চাইছে ইউজিসি। প্রাচীন ভারতের শাস্ত্র বলতে শুধুই হিন্দু শাস্ত্র বোঝাতে চায় ইউজিসি। নির্দেশিকায় বলা হচ্ছে, পঠনপাঠনের সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি মন্দিরে যেতে বলা হচ্ছে। মসজিদ বা গুরুদ্বারে কেন যাওয়ার কথা কেন বলা নেই সেখানে, সে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন একাংশ।