জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: এলএমটেন আর সিআরসেভেন-এর তুলনা সর্বজনবিদিত। মোটামুটি ভাবে ধরেই নেওয়া হচ্ছে, সদ্যসমাপ্ত কাতার বিশ্বকাপ এই দুই মহাতারকার কেরিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ (যদিও আর্জেন্টিনা কোচ বলেছেন, পরের বিশ্বকাপেও তিনি মেসিকে দলে চান, তবে সেটা সত্য়িই সম্ভব হবে কিনা, কেউ বলতে পারে না)। সিআরসেভেন তথা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এখন ৩৭, পরের বিশ্বকাপে তিনি হবেন ৪১; এলএমটেন তথা লিওনেল মেসি এখন ৩৫, পরের বিশ্বকাপে তিনি হবে ৩৯। এঁদের প্রতিভা এমনই উচ্চ মানের যে, বলা যায় না, তাঁরা ওই বয়সে গিয়ে খেলাটা হারিয়ে ফেলবেন। তবে, সাধারণ ভাবে বলা যায়, সব কিছু স্বাভাবিক থাকলে এই দুই মহারথী আর খেলবেন না।
আরও পড়ুন: কাপ মেসির হাতে, এদিকে গ্যালারির সুন্দরী ক্রমশ উন্মুক্ত করছেন নিজের স্তনভার…
আর ঠিক এই কারণেই এই বছরে এই দুই মহারথীর তুলনার বহরটা বিপুল। আর সেই তুলনার আবহেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর এবারের খারাপ ফর্ম একটা ছন্দপতন ঘটিয়েছে। ঘটালে কী হবে? রোনাল্ডোভক্তেরা নাগাড়ে বলে চলেছেন, রোনাল্ডোকে তাঁর ক্রীড়াজীবনের যে নানামুখী সংকটের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে বা যেতে হচ্ছে, মেসিকে সেটা হয়নি। আর তাই রোনাল্ডোর এই খারাপ ফর্মটা আশ্চর্যের কিছু নয়, হতেই পারে।
আরও পড়ুন: FIFA World Cup Final 2022: ম্যাচ জেতার পরে গোলপোস্টের জাল কেন কেটে পুড়িয়ে দিলেন মেসিরা?
রোনাল্ডোকে এতটুকু ছোট না করেই বলা যায়, মেসির জীবনেও সংকট-বিঘ্ন কম আসেনি। তথাপি মেসির সাফল্য এটাই, তিনি সেসবকে তাঁর মাথায় চড়তে দেননি, সেগুলির নেতিবাচক প্রভাব পড়তে দেননি নিজের সংকল্পে, খেলায়। আর তাই অন্তত টেমপারামেন্টের দিক থেকেও এই সময়-পর্বে রোনাল্ডোর চেয়ে অনেকটা এগিয়েই থেকেছেন মেসি।
রোনাল্ডোর জীবনে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আলাদা জিনিস। এই ক্লাব দিয়েই যেন নতুন করে লেখা হয় ফুটবলার রোনাল্ডোর কেরিয়ার। কিন্তু এ হেন ক্লাবের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে তাঁর। তিনি চুক্তিভঙ্গ করেছেন বলে ছড়িয়ে যায়। যা তাঁর পক্ষে যথেষ্ট অপমানজনক, এতে যে কোনও খেলোয়াড়েরই ফোকাস নড়ে যেতে পারে এবং রোনাল্ডোর গিয়েছে। এর পাশাপাশি আবার পর্তুগালের কোচের সঙ্গে তাঁর ঠান্ডা লড়াই নিরন্তর তাঁকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে, সঙ্গে থেকেছে ছোটখাটো চোট। তাঁকে ছাড়াই এই বিশ্বকাপে দল গড়েছেন পর্তুগাল কোচ। সব মিলিয়ে তাঁর উপর চাপ তৈরি হয়েছে।
আর মেসির উপর চাপ?
১৩ বছর বয়স থেকে ৩৪ বছর– বার্সেলোনার সঙ্গে লম্বা সংসার মেসির। কিন্তু যখন নানান পারিপার্শ্বিক কারণে মেসিকে এহেন নাড়ির টানওয়ালা ক্লাবের সঙ্গে বন্ধন ছিন্ন করার লগ্নে এসে পৌঁছতে হয়েছিল, তখন, সন্দেহ নেই, বিপুল মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল তাঁকে। মেসির বউ আন্তোনেল্লা পর্যন্ত হকচকিয়ে গিয়েছিল মেসির এই আশ্চর্য সিদ্ধান্ত নিয়ে। কিন্তু নতুন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে সম্পূর্ণ নতুন এক পৃথিবীতেও গিয়ে পড়তে হয়েছিল ফুটবলের রাজপুত্রকে। ‘প্যারিস সাঁজা’য় মেসি যেন প্রথম-প্রথম ঠিক মানিয়ে উঠতে পারছিলেন না। আর তাঁর ওই দ্বিধাচকিত পারফর্ম্যান্সের জেরে দর্শকেরাও ক্রমশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছিলেন তাঁর প্রতি। এতটাই যে, খেলার মাঠে স্বয়ং মেসিকে, একের পর এক ব্যালন ডি’ওর জেতা মারাদোনা-পরবর্তী ফুটবলের রাজপুত্রকে শুনতে হয়েছিল ‘বু’ ডাকও! সেটা মেসির পক্ষে কম যন্ত্রণার ছিল না। আর এসবের ঢের আগেও তিনি নিদারুণ অপমানিত হয়েছেন। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরে গিয়ে বিপুল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন মেসি। অনেকে ধরেই নিয়েছিল, হয়তো দেশের হয়ে খেলা ছেড়ে দেবেন তিনি। না সেদিন সেটা ঘটেনি। ঘটেনি বলেই ২০২২-এর এই দৃশ্যের সাক্ষী থাকল বিশ্ব। কিন্তু তার আগে? তার আগে মেসিকে এই সবটাকে সঙ্গে নিয়েই, এই ঘাত-প্রতিঘাত, ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার যন্ত্রণা– এই সবটা নিয়েই লড়াইটা লড়তে হয়েছে এবং লড়তে লড়তেই তিনি সংকল্প করে নিয়েছিলেন, ‘হয় এবার, নয় নেভার’!
‘গ্রেট’ তো তখনই ‘গ্রেট’, যখন তিনি সব ধরনের চাপ সামলে পারফর্ম করে যান। শেষ ল্যাপে তাই কোথায় যেন মেসিকেই এগিয়ে রাখতে হয়। ঘর-ভাঙা দুই খেলোয়াড়ই আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ভাঙা ঘরে জোছনা নামিয়ে আনতে পেরেছেন এলএমটেন-ই।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)