মেঘনায় ট্যাংকার ডুবি, ১৫ কিলোমিটার দূরেও পেট্রোলের গন্ধ

মেঘনায় তেলের জাহাজ ডুবিতে পরিবেশের অনেক বড় ক্ষতি হলেও তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি বলে দাবি পরিবেশ অধিদফতরের। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ (ডিও লেভেল) ৫ থেকে ৮ এর মধ্যে থাকাটা আদর্শ। পরিবেশ অধিদফতর স্থানীয়ভাবে দুটি পানির নমুনা পরীক্ষা করেছে। তাতে তেলের সংমিশ্রণ নেই এমন জায়গাতে ডিও লেভেল পাওয়া গেছে ৮ দশমিক ১৯ অন্যদিকে তেলের সংমিশ্রণ আছে এমন পানিতে ডিও লেভেল পাওয়া গেছে ৭ দশমিক ৯৯। 

ভোলা জেলা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক তোতা মিয়া বলেন, মেঘনার এই অংশে নদীটি প্রায় ২০ কিলোমিটার চওড়া। তীর থেকে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার দূরে জাহাজ ডুবেছে। আমরা সেখানে যেতে পারিনি। কোস্টগার্ডের কাছ থেকে শুনেছি একটি চেম্বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখান থেকে তেল বের হয়েছে। ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেনের মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিজেল পানির সঙ্গে দ্রুত মিশে যায়। অকটেন এবং পেট্রোল বাতাসে উড়ে যায়। আমরা নদীর তীরে গিয়ে অকটেন এবং পেট্রোলের গন্ধ পেয়েছি। এতে পরিবেশের অবশ্যই ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, পানির মধ্যে থাকা মাছ এবং ক্ষুদ্র অণুজীব ধ্বংস হয়েছে।

পরিবেশ অধিদফতর বরিশাল কার্যালয় সূত্র বলছে, স্থানীয়ভাবে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরমধ্যে পরিবেশ অধিদফতরের তদন্ত কমিটি বলছে এ ধরনের দুর্ঘটনার পর দ্রুত জাহাজটিকে উদ্ধার করা গেলে ক্ষতির পরিমাণ কম হতো।

কিন্তু অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিটিএ)  হাতে এত ভারি জাহাজ তোলার মতো কোনও ব্যবস্থা নেই। জাহাজে ৯২৯ টন তেল রয়েছে, এরমধ্যে ৭৫৮ টন ডিজেল, ১৭১ টন অকটেন। এছাড়া জাহাজের ওজন আরও ৩৫০ টন। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ সর্বোচ্চ ২৫০ টনের নিমজ্জিত জাহাজ তুলতে পারে।

এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, এখন তাদের লক্ষ্য জাহাজটি টেনে তোলা। এজন্য একটি বেসরকারি কোম্পানির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। তবে আজ বিকেলে এ বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য তাকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি। পরে কথা বলার আগ্রহের কথা উল্লেখ করে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।

বিপিসি দাবি করছে, জাহাজের ১০টি চেম্বারের মধ্যে একটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটিতে কেবলমাত্র ডিজেলই ছিল। তাহলে জাহাজ ডুবে যাওয়ার ১০/১৫ কিলোমিটার দূরে কিভাবে পেট্রোল এবং অকটেনের গন্ধ ভেসে আসছে তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এ ধরনের দুর্ঘটনার পর বরাবরই সরকারি সংস্থাগুলো তথ্য গোপন করার চেষ্টা করে থাকে। এবারও এমনটি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিকার নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, দুর্ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক নয়। অস্বাভাবিক হচ্ছে দুর্ঘটনা ঘটার আগে বা পরে এই ঘটনা ঘটলে আমরা কী করবো সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রস্তুতি কোনও দিনই ছিল না। আজও নেই। এর আগেও সুন্দরবনের কাছে এমন তেলের ট্যাংকার ডুবেছে। তখন অনেক আলোচনা হয়েছে। অথচ সেই সময়ে প্রস্তুতির ব্যাপারে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল, তা আজও বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে আমরা জানি না।

তিনি বলেন, তেলের কারণে ইতোমধ্যে নদীতে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশ বাঁচানোর এই উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট সংস্থা গুলোর কোনও ভূমিকা চোখে পড়ছে না। অথচ এই ছড়িয়ে পড়া এই তেল সংগ্রহ করার কাজটি খুব একটা ব্যয়বহুল নয়। শুধু আন্তরিকতারই অভাব বার বার দেখা যায়।