Mamata Banerjee: ‘‌মানব সেবার অংশ হতে পারলে আপ্লুত হয়ে যাই’‌, মুখ্যমন্ত্রীর আবেগঘন ফেসবুক পোস্ট‌

গঙ্গাসাগর মেলায় গিয়ে নিজের যাবতীয় কর্মসূচি শুরু করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ডুমুরজলা হেলিপ্যাড থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে গঙ্গাসাগর রওনা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে পৌঁছে নতুন স্থায়ী হেলিপ্যাডের উদ্বোধন থেকে শুরু করে কপিল মুনির আশ্রমে পুজো—সবকিছুই সেরেছেন তিনি। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তিনি। আর চারিদিক পরিদর্শন করে রাতে একটি আবেগঘন ফেসবুক পোস্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিকে গঙ্গাসাগরে এসে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফেসবুক পোস্টের শুরুতেই তিনি লেখেন, ‘সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার।’ গঙ্গাসাগরে একজন সাংবাদিকের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর তিনিই জানান। এমনকী তাঁকে কলকাতায় পাঠিয়ে সুস্থ করার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও লিখেছেন তিনি। হঠাৎ রাস্তায় থেমে যায় মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির কনভয়। গাড়ি থেকে নেমে মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে একটি শাঁখ বিক্রির দোকানে যান। দোকানের মালিকের মাটির বাড়িতেও যান। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সুখ–দুঃখের কথা শোনেন। তারপর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‌আমি সুরক্ষা কবচ করে এলাম।’‌


ঠিক কী লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী?‌ অন্যদিকে নিজের ফেসবুক পোস্টে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘সাগরদ্বীপে পৌঁছে মা–বোনেদের শ্রুতিমধুর শঙ্খধ্বনি আমাকে আবেগমথিত করে তুলেছিল। গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতিপর্ব আমরা বহু পূর্বে সেরে ফেলেছিলাম। পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে আমি তিনটি হেলিপ্যাড, কুরুলিয়া খালের উপর কামারহাট সেতু, কপিলমুনির আশ্রম সংলগ্ন একতল ভবন এবং মন্দিরের উন্নতিকল্পে আরও বেশ কিছু পরিকাঠামোর আজ উদ্বোধন করলাম। বাংলার মোট পাঁচটি মন্দির তথা—দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট, তারাপীঠ, তারকেশ্বর এবং জহুরা কালীবাড়ির অবিকল প্রতিরূপ উদ্বোধন করলাম মেলা প্রাঙ্গণে। আলোক মালায় সেজে উঠেছে মেলা চত্বর।’‌

আর কী লেখা আছে পোস্টে?‌ তিনি গঙ্গাসাগরে ভারত‌ সেবাশ্রম সংঘের মন্দিরে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। আর লিখেছেন, ‘আমি গিয়েছিলাম ভারত‌ সেবাশ্রম সংঘে। দুর্যোগের সময় তাঁরা যেভাবে সাধারণ মানুষের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দেয়, তা আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। জাতি–ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে তাঁরা মানব কল্যাণের জন্য আজীবন কাজ করে যায়‌। সেখানে আমি নিজে এলাকাবাসীর হাতে কম্বল তুলে‌ দিলাম। প্রশাসনিক কাজের ফাঁকে মানব সেবার অংশ হতে পারলে আপ্লুত হয়ে যাই। আমরা তীর্থ কর মুকুব করেছি। উৎসবের সময় যে কোনও পুণ্যার্থী দুর্ঘটনার কবলে পড়লে, আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের জন্য ৫ লক্ষ টাকার বিমার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগত স্তরে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করেছি, যেন এই ইতিহাস সমৃদ্ধ গঙ্গাসাগর মেলা, জাতীয় মেলার তকমা পায়। সাগরবাসী আমার হৃদয়ের অত্যন্ত কাছের। রাজ্য সরকারের একক প্রয়াসে এখানে দেশের অন্যতম বৃহৎ মেলা আয়োজিত হয়।’

কপিল মুনির মন্দিরের সামনে গাড়ি থেকে নেমে মুখ্যমন্ত্রী প্রথমেই চলে আসেন লোহার ব্যারিকেডের ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা বহু তীর্থযাত্রী ও স্থানীয় মানুষের দিকে। করজোড়ে তাঁদের নমস্কার জানান। ভিন রাজ্য থেকে বহু তীর্থযাত্রীরা সেখানে ছিলেন। তাঁদের কাছে শুভেচ্ছা জানানোর সঙ্গেই কিছু কথাবার্তাও বলেন তিনি। তিনি আরও লিখেছেন, ‘এই মেলা রাজ্যের ঐতিহ্য। এই মেলায় আগত সকলকে ভাল রাখা, সুস্থ রাখার দায়িত্ব আমাদের। আগত সকল পুণ্যার্থীদের বলব নিয়ম মেনে এই পুণ্যস্নানের অংশ হয়ে উঠুন। সাগরদ্বীপের এই পুণ্য জলে ধুয়ে যাক আপনাদের জীবনের সমস্ত গ্লানি।’‌ আজ, বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় ফিরে যাবেন।