ট্রলারচালক থেকে চা বিক্রেতা, মাসে আয় ৭০ হাজার টাকা

একসময় আড়িয়াল খাঁ নদীতে চালাতেন ট্রলার। ফলও বিক্রি করেছেন ঢাকার কারওয়ান বাজারে। অভাব-অনটনের পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলার শরিফুল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজ করেছেন। তবে কোনও জায়গায় খুব সুবিধা না করতে পেরে নিজ গ্রাম মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সর্দার কান্দিতে চলে আসেন এই যুবক। সেখানেই দিয়েছেন চা দোকান। আর সেটি থেকে এখন মাসিক আয় ৭০ হাজার টাকা।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকালে শিবচর-মাদারীপুর আঞ্চলিক সড়কের আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের বাসতলা নামক স্থানে চোখ পড়ে শরিফুলের দোকানটি। সেখানে ছোট্ট একটি টঙ ঘরে সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে চা বিক্রি। সারাদিনই দোকানে লেগে থাকে ভিড়। সন্ধ্যায় সবচেয়ে বেশি ভিড় থাকে। বর্তমানে এই চা এলাকায় শরিফুলের মালাই চা নামে পরিচিত।

এই দোকানে শুধু চা বিক্রি করেই দৈনিক আয় আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। খরচ বাদে তার মাসিক আয় ৭০ হাজার টাকার মতো। চায়ের পাশাপাশি তিনি রুটি, বিস্কুট, চানাচুরসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বিক্রি করেন।

তার চা গোটা এলাকায় বিখ্যাত। অনেক দূরের মানুষও চা খেতে ভিড় জমান তার দোকানে। ব্যবসার পরিস্থিতি জানতে চাইলে শরিফুল বলেন, গত দুই বছর ধরে আমি চা বিক্রি করি। প্রতিদিন ৫০-৬০ কেজি দুধের মালাই চা বিক্রি করি। দৈনিক চার জন দুধ বিক্রেতা আমাকে তাদের গাভির দুধ দিয়ে থাকেন। এ ছাড়াও নিকটস্থ শেখপুর বাজার, আমাদের বাসতলার বাজার ও স্থানীয় হবিগঞ্জ বাজার থেকে দুধ সংগ্রহ করি। প্রতি কাপ চা ১৫ টাকায় বিক্রি করি। এতে দেখা যায় দৈনিক ৩০০ কাপ চা বিক্রি হয়। তাছাড়া শুক্রবার দিন প্রায় ৫০০ কাপের মতো চা বিক্রি হয়। এতে কাপপ্রতি খরচ বাদে পাঁচ টাকার মতো থাকে।

শিবচর উপজেলার বাঁশকান্দি ইউনিয়নের ছলেনামা এলাকার প্রবাসী রিয়াজ হাওলাদার এসেছেন স্ত্রী ও শালিকা নিয়ে চা পান করতে। এ সময় তিনি বলেন, আমি নিয়মিত এই দোকানের কাস্টমার। বাড়ির কাছে, তাই আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে এখানে প্রায়ই আসি। এখানকার চা খুব ভালো।

শিবচরের দ্বিতীয়খণ্ড এলার যুবক শাহিন বিন আনিস বলেন, শরিফুল ভাইয়ের চায়ের কথা আগে অনেক শুনেছি। আজ এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় মনে পড়লো চা খেয়ে যাবো। আসলেই এই চা খুব ভালো।

এ সময় সেখানে চা খেতে আসা অনেকেই সুনাম করেছেন। মাদারীপুর পৌর এলাকার ইলিয়াস আহমেদ নামে একজন বলেন, আমি শহরের পৌর মোড় থেকে দুধ চা খেতে এখানে প্রায়ই আসি। এখানকার চা এক কথায় অসাধারণ। এ ছাড়াও স্থানীয় একাধিক লোক চায়ের সুনাম করেন।

শরিফুল বলেন, একসময় অনেক কষ্ট করছি। পরিবারের লোকজন, মা-বাবাসহ আমরা অনেক কষ্ট করতাম। কারওয়ান বাজারে ফল বিক্রি করতাম। একসময় ট্রলার চালাতাম আড়িয়াল খাঁ নদীতে। মানুষের মালামাল শেখপুর হাট, উৎরাইল হাট, মাদারীপুরে নিয়ে যেতাম। তাতে অনেক কষ্ট হতো। আজ দুই বছর ধরে অনেক ভালো আছি, আপনাদের দোয়ায়।