‘শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের কথা মৃতরাই ভালো জানে’ 

‘দ্য সেভেন মুনস অব মালি আলমেইদা’ শ্রীলঙ্কার ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধের বিভিন্ন বর্বরতা নিয়ে অপার্থিবভাবে অপ্রাসঙ্গিক। শেহান কারুনাতিলাকার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য সেভেন মুনস অব মালি আলমেইদা’ ২০২২ সালে বুকার পুরস্কার অর্জন করে। 

ঢাকা লিট ফেস্টের সমাপনী দিনে বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে শেহান কারুনাতিলাকা সেভেন মুনস অব মালি আলমেইদা নিয়ে কথা বলেন। সঞ্চালনা করেছেন ভারতীয় সাংবাদিক ও লেখক কানিষ্কা গুপ্তা। 

সঞ্চালক কানিষ্কা গুপ্তা শেহানকে জিজ্ঞেস করেন বইয়ের প্রকাশক আপনি নিজেই। সেক্ষেত্রে কত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়েছে আপনাকে? উত্তরে শেহান বলেন, ‘দ্য সেভেন মুনস’ বিক্রি করতে ভীষণ বিপাকে পড়তে হয়েছিল তাকে। ‘ইংরেজি ভাষী দুনিয়ার সবচেয়ে বিশিষ্ট সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছি সে উপন্যাসের জন্য, এটি একটি ঘটনাই বটে। আমাদের বই শ্রীলঙ্কার বাইরে প্রকাশ পাবে তা আমরা আশা করি না। আমরা যদি ভারত, পাকিস্তান অথবা বাংলাদেশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি, সেটাই অনেক বড় সাফল্য। কিন্তু তারও নিশ্চয়তা নেই।’

নিজের অভিজ্ঞতাকে একজন শ্রীলঙ্কান লেখকের পক্ষে তাই অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন না শেহান কারুনাতিলাকা। নিজের এ উপন্যাসটি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ সম্পর্কে সত্য জানে কেবল মৃতরাই। সুতরাং তাদের গল্প তারাই বলুক। তারই প্রতিনিধিত্ব করছে উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র মৃত মালি অ্যালমেইডা, যাকে কেউ খুন করেছিল। এরইমধ্যে উপন্যাসটিকে নানাভাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আগামী ১০ বছরে শ্রীলঙ্কার পাঠকসমাজ সেভেন মুনসকে ফ্যান্টাসির মর্যাদা দেবে। কারণ, যে শ্রীলঙ্কায় তারা বাস করে সেটার সঙ্গে এর কোনও মিল নেই।’ তিনি আশা করেন যে লোকরা বলবে ‘সত্যিই এসব ঘটেছিল? তুমি এসব বানিয়ে লিখেছো? দুঃখের বিষয়, সেই সময় আর এই সময়কে সমান করে আঁকছে লোকজন।’ 

সঞ্চালক কানিষ্কা গুপ্তা শেহানকে মজার ছলেই জিজ্ঞেস করেন শ্রীলঙ্কার বর্তমান সময় তো আমাদের সবারই জানা। ‘যখন আপনি বুকার পুরস্কার পেলেন তখন তো শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অবস্থা ভয়ংকর খারাপ। আপনি কি আনন্দে প্রেসিডেন্টের সুইমিংপুলে ঝাঁপ দিয়েছিলেন?’ উত্তরে শেহান বলেন, ‘আমি সুইমিংপুলে ঝাঁপ দেইনি। কিন্তু দূর থেকে সেলফি তুলছিলাম।’

উপন্যাসের গল্পে আবার ফিরে এসে শেহান বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধের সময় শ্রীলঙ্কান আর্মি ও তামিল টাইগারদের যে দ্বন্দ্ব চলছিল, তখন এন্টিগনিস্ট ও প্রোটাগনিস্ট সবাই মৃত। ২০১৫ সালে আমরা এক নতুন বাকস্বাধীনতা পেয়েছিলাম। যেখানে শুধুই প্রোটাগনিস্টদের গল্প চলে এসেছিল।’

সঞ্চালক শেহানকে বলেন, আপনি তো অনেক সহজেই কৌতুকপূর্ণভাবে রাজনৈতিক গল্প বলতে পারেন। মজার ছলে শেহান বলেন, ‘আমি মোটেও সহজভাবে কিছু বলতে পারিনি।’ সেভেন মুন অব মালি আলমেইদা’র নায়ককে সমকামী বোঝানোর ব্যাপারে শেহান বলেন, ‘নিষিদ্ধ কথা বলতে পারাই আমার কাছে সার্থকতা। এখানে শুধু আমি যুদ্ধের কথা বলিনি। বলেছি ভালোবাসার কথা, বলেছি রহস্যের কথা।’  

সঞ্চালক কানিষ্কা গুপ্তা শেহানের কাছে বুকার পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত অর্থ নিয়ে পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার সাহিত্যের জন্য আমরা কাজ করে যেতে চাই। একটি স্বাধীন ফাউন্ডেশন তৈরি করবো, যেখানে শুধু সাহিত্য নিয়ে কাজ হবে।’

আলোচনার শেষদিকে শেহান তার স্বপ্নের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘একসময় স্বপ্ন দেখতাম স্টিভেন কিং-এর বইয়ের সঙ্গে আমাদের বই থাকবে। বুকশেলফের নিচের স্তরে আমাদের বই দেখলে আমার খারাপ লাগতো। এখন আমার এই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’